খোলা আকাশের নিচে ঘাসের চাদরে বসে ১০৫ জন শিশু নিচ্ছে শিক্ষার আলো। বঙ্গোপসাগরের মিরসরাই উপকূলের অবহেলিত দুটি গ্রাম গজারিয়া আর ডোমখালীর বাসিন্দা তারা। এই দুই গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার অধিকাংশ শিশু শিক্ষা-স্বাস্থ্য আর চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০১৩ সালে স্থানীয় শিক্ষিত কয়েকজন যুবক প্রতিষ্ঠা করেন ‘সোনালী স্বপ্ন’ পাঠশালা।
সুবিধাবঞ্চিত কয়েকজন শিশুদের নিয়ে বেড়িবাঁধের পরিত্যক্ত একটি ঘরে শুরু হয় পাঠদান। স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত সেটিও ভেঙে দেয়। সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে চলে তাদের পাঠদান। জানা গেছে, বেড়িবাঁধ এলাকার শিশুরা কখনো স্কুলে যেতো না। আর গেলেও অভিভাবকদের সচেতনতা আর স্কুল অনেক দূরে হওয়াতে পড়াশোনার বাইরে থেকে যেত। খুব অল্প বয়স থেকে তারা সংসারের আয় রোজগারে নেমে পড়তো।
বিশেষ করে জেলে পল্লীর শিশুরা ৮-৯ বছর বয়স থেকে পরিবারের বড়দের সঙ্গে মাছ ধরতে সাগরে যেতো। তাই এসব এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সোনালী স্বপ্নের সংগঠনের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় প্রতি বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এসব এলাকার শিশুরা অংশ নেয়। তারা কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছে। এর পূর্বে বেড়িবাঁধ এলাকার আর কোন শিশু শিক্ষার সিঁড়ি আহরণ করতে পারেনি। এখন তাদের স্বপ্নজয়ের শারথি হয়েছে ‘সোনালী স্বপ্ন’।
বর্তমানে এখানে পাশ্ববর্তী গ্রামের ১০৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পড়ানো হয়। পাঠশালাটিতে বর্তমানে পড়ানোর দায়িত্বে আছেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, সপ্তাহে দুদিন শুক্রবার এবং শনিবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে পাঠদান কার্যক্রম। বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দূরে হওয়ায় এবং যাতায়াত সমস্যার কারণে তারা সেখানে যেতে চায়না। অভিভাবকদের দাবি এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।
পাঠশালার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাজমা আক্তার বলেন, আমার তিন সন্তান এখানে পড়তে আসে। আমাদের এলাকা থেকে স্কুল অনেক দূরে। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুব জরুরি। সরকারের কাছে আহ্বান করছি এখানে যেন একটি স্কুল করে দেয়।
সোনালী স্বপ্নের সভাপতি মঈনুল হোসাইন টিপু বলেন, খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের। এখানটায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের বেশ প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। দূরত্বের কারণে অনেকেই যে ঝরে পড়ে যায়, সেই ঝরে পড়া রোধ করা যাবে। বেড়িবাঁধের আশপাশে কোন সাইক্লোন শেল্টার নেই। যদি এই এলাকায় কোন স্কুল হয় তাহলে সেটিকে সাইক্লোন শেল্টার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
পূর্বকোণ/ইব