টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের উপকরণ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনি ও লবণসহ ২০ ধরনের নিত্যপণ্য দিচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী।
পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়ে পণ্য পাওয়ায় খুশিতে এ সীমান্ত ও দ্বীপ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষেরা আনন্দিত। প্রথম দিনে ৭০০ স্থানীয় দুস্থ পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করতে পেরেছেন। দুটি বাজার ইভেন্টে প্রায় ৫ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই প্লাস্টিকসমূহ পুরোটাই রি-সাইকেল করা হবে বলে জানা গেছে।
টেকনাফ পৌর সভার জালিয়াপাড়া নাফ নদীর পাশে বিজিবি মাঠে বিশাল একটি সুপারশপ বসেছে নানা রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে। মানুষ প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব কিনতে পারছেন। বাজারে ১ কেজি প্লাস্টিকের দাম ২০-৩০ টাকা হলেও এই বাজারে সেটির প্রায় ৫০-৮০ টাকা মূল্য দেয়া হচ্ছে। ১ কেজি প্লাস্টিক দিয়ে ১ কেজি চাল যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি ৬টি ডিম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ কেজি প্লাস্টিকে। প্রায় ১৯টি পণ্য থেকে নিজেরাই বাছাই করে কেনার স্বাধীনতা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। একইভাবে সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটস্থ সমুদ্র সৈকতে বসেছে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার। সেন্টমার্টিনের মানুষের কাছে প্লাস্টিকের কোনো মূল্য নেই। কারণ সেখানে কোন ভাঙ্গারির দোকান নেই। নেই কোনো রিসাইক্লিং ব্যবস্থা। সেখানের মানুষ জন ১০০% সাবসিডি দিয়ে বাজার পাচ্ছেন।
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা একেবারেই অসম্ভব। এই দূষণ কমাতে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা সারাদেশে প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর চালু করেছি। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আমরা অবহিত করেছি। আশা করছি এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমরা জনগণকে ধারণা দিতে পারব ও প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের এই আইডিয়া বাস্তবায়নে সরকারও এগিয়ে আসবে। দেশব্যাপী এই প্রজেক্টে আর্থিক সহযোগিতা করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। জেলা প্রশাসন কক্সবাজার জেলায় এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি হচ্ছে প্লাস্টিক। যে কোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণীকূলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।
পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ