প্রথম দেখায় গাছে ঝুলে থাকা বেগুনগুলোকে দেখলে লাউ বলে ভুল হয় সবার। প্রতিটি বেগুনের ওজন ৮’শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি, এই সাইজের বেগুন কেউ আগে দেখেনি। তাই চলার পথে প্রথম এমন বেগুন দেখে ক্ষেতের পাশে এসে একবার থমকে দাঁড়ান অন্য কৃষকরাও। তারপর কৌতহূল নিয়ে জানতে চান এ বেগুন সম্পর্কে।
সীতাকুণ্ডে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজিপাড়া গ্রামে বারি বেগুন-১২ নামক এই ব্যতিক্রমী বেগুন চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক মো. আবু জাফর (৫০)। সরেজমিনে এই বেগুন ক্ষেতে গেলে কৃষক আবু জাফর জানান, সীতাকুণ্ডে এই বেগুন আগে কেউ চাষ করেননি। বারি বেগুন-১২ নামের এই বেগুন চাষ সম্পর্কে তিনি ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে জানতে পারেন। তারপর বেগুনটি চাষে আগ্রহী হয়ে বীজ সংগ্রহ ও চাষে সহযোগিতার জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করলে কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লা এবং উপ সহকারী কৃষি অফিসার মো. আবুল মুনছুর তাকে বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে চারা রোপণ-পরিচর্যায় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন। তাদের সহযোগিতা পেয়ে প্রথম বারেই ৮৫ শতক জমিতে বারি বেগুন-১২ চাষ করেন। প্রথম চাষের কারণে আদৌ ভালো ফলন হবে কিনা তা নিয়ে মনে সংশয় থাকলেও আড়াই মাস পর থেকেই ক্ষেতে ফলন আসতে শুরু করলে আশাবাদী হয়ে উঠেন তিনি। বর্তমানে এই ক্ষেতের বেশিরভাগ গাছেই থোকা থোকা বেগুন ঝুলছে। এই বেগুনগুলো বড় হতে হতে ৫০০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ দেড় কেজি সাইজ পর্যন্ত হচ্ছে। দেখতে প্রায় লাউয়ের সাইজ হওয়ায় স্থানীয়রা বেগুনটিকে লাউ বেগুন নামে আখ্যায়িত করছেন। ১৪ হাজার বেগুন গাছের এই বিশাল বাগানটি করতে তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছিলো। ইতিমধ্যে তিন দফায় ১৫০০ কেজি বেগুন বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি কেজি পাইকারিতে ৪০-৪৫ টাকা দামে বিক্রি শুরু হয়েছে। এতে খরচের টাকা উঠে গেছে। শীত মৌসুমের আরো কয়েক মাসে তিনি বেগুন বিক্রি করে লাখ টাকার বেশি টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর চেয়েও তার কাছে ভালো লাগছে এই বেগুন দেখে আশপাশের কৃষকদেরও আগ্রহ বেড়েছে। তাই আগামীতে এই বেগুন চাষ উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করছেন। আবু জাফরের বেগুন চাষ দেখে আগ্রহের কথা জানান একই এলাকার অপর কৃষক মো. আলমগীর। তিনি বলেন, এমন বেগুন দেখে আমরাও হতবাক। কিন্তু আবু জাফরের সফলতা দেখে আমারও এই বেগুন চাষে আগ্রহ হয়েছে। আমিও আগামীবার এই বেগুন চাষ করব। এলাকার অন্য কৃষকরাও এই বেগুন চাষ করতে আগ্রহী।
আবু জাফরের বেগুন ক্ষেতের এক কর্মী বলেন, বহুকাল কৃষির সাথে জড়িত আছি আমরা। কিন্তু এই প্রথম এত বড় বেগুনের চাষ দেখলাম।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লা ও বাঁশবাড়িয়া ব্লক এর দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবুল মুনছুর প্রায় অভিন্ন বক্তব্য রেখে বলেন, ইউটিউবে বারি বেগুন-১২ চাষ দেখে কৃষক আবু জাফর আমাদের কাছে চলে আসেন। তার আগ্রহ দেখে আমরা তাকে বীজ সংগ্রহ, চারা রোপণ থেকে ফলন আসা পর্যন্ত যাবতীয় পরামর্শ দিয়েছি। তার বেগুন দেখে দারুণ ভালো লাগছে। এ বেগুন খেতেও স্বাদ।
তারা বলেন, কৃষক আবু জাফরের খরচ ইতিমধ্যেই উঠে গেছে। আগামী কয়েকমাস তিনি শুধু লাভ করবেন। তাই যারা আগামীতে এই বেগুন চাষ করবেন তারাও ভালো লাভবান হবেন বলে আমরা মনে করছি।
পূর্বকোণ/পিআর