উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলার ৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২০টির অবস্থা খুবই করুন, ৯০ দশকে নির্মিত জরাজীর্ণ ভবনে চালানো হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক উপজেলার বাগান বাজার, নারায়ণহাট, ভূজপুর ও খিরাম ইউনিয়নের দুর্গম এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত বলে জানা যায়।
এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনমহলে লিখিতভাবে তাগাদা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জানা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক অবস্থিত।
জনসংখ্যা বিবেচনায় ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলির অবস্থান। এর মধ্যে সুয়াবিল ইউনিয়নের শুভনছড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে গত ৫বছর ধরে, লেলাং ইউনিয়নের রায়পুর কমিউনিটি ক্লিনিক, ধর্মপুর ইউনিয়নে আমতলি সামশুদ্দিন কমিউনিটি ক্লিনিক ও নাজিরহাট পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডে ছাপা-লায়লা কমিউনিটি ক্লিনিকে গত এক বছর ধরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নেই। ফলে ওই সব ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রম চলে সপ্তাতে মাত্র তিন দিন। তাও অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি এনে চালানো হচ্ছে।
যে ক্লিনিক থেকে সিএইচসিপি আনা হচ্ছে সেসব ক্লিনিক চালানো হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারী দিয়ে। অর্ধেক কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই বিদ্যুৎ সুবিধা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গুলোতে দেখা দিয়েছে নানান সমস্যা, যা এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম। দেখলে মনে হয় দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত ভবন। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ফটিকছড়ির স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। এদিকে কর্মরত সিএইচসিপিগণ গত ৬মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে জানা যায়।
বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিকের জন্য দৈনিক ২২ পদের ওষুধ বরাদ্দ রয়েছে। সরবারহকৃত ওষুধের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের চাহিদা বেশি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র মতে, উপজেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ইউনিয়নের যে ওয়ার্ডে উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিক অবস্থিত সে-ই ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার।
লেলাং ইউনিয়নের বাসিন্দা মুহাম্মদ আবছার জানান, সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনেই তো কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকে। খোলা থাকলে প্রচুর রোগী হয়। তিনি জনবহুল লেলাং ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিদিন খোলা রাখার দাবি জানান।
দাঁতমারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মুহাম্মদ কামাল জানান, হেয়াঁকো সরকারপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক হতে আমি আমার পরিবার চিকিৎসা নিয়ে থাকি। এখানে কিছু ওষুধ ফ্রি পাই। সপ্তাহে ৫দিন ডাক্তার আসে। সেবা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
ভূজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সিংহরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি স্থানীয় মেম্বার মুহাম্মদ লোকমান জানিয়েছেন- আমার ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রম ভালো ভাবে চলছে। সপ্তাহে একদিন এমবিবিএস ডাক্তার আসেন। ইউনিয়নবাসী ভালো ভাবে সেবা পাচ্ছে। আমি নিজেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে তদারকি করি।
ধর্মপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত আজাদী বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাপ্রাপ্ত রীতা দাশ জানান, ডাক্তার প্রায়ই দেরিতে আসেন। অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। ২টার পর গেলেতো ডাক্তারই পাওয়া যায় না। ফিরে যেতে হয় অনেক রোগীকে। যতটুকু সেবা পাচ্ছি তাতে মোটামুটি সন্তুষ্ট।
এ নিয়ে উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি স্থানীয় মেম্বার আবুল হাসেম জানান, সিএইচসিপির বাড়ি দূরে হওয়ায় উনার আসা-যাওয়ায় একটু দেরি হয়। স্থানীয় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে ভালো হতো। এছাড়া সেবা নিয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে ক্লিনিকের কমিউনিট হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মুহাম্মদ ফরহাদ উদ্দিন জানান, ওষুধ ও জনবল সংকটসহ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্নমুখী সমস্য রয়েছে। গত ৬মাস ধরে সিএইচসিপিগণ বেতন পাচ্ছে না। অথচ ক্লিনিকগুলোতে গ্রামীণ পর্যায়ের জনসাধারণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফলে নানাবিধ সমস্যার কারণে স্থানীয়দের কাছে ক্লিনিকগুলোর বদনাম হচ্ছে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম জানান, দৈনিক গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা নিচ্ছেন। এতে রোগীরা সন্তুষ্ট। জরাজীর্ণ ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং সিএইচসিপি নিয়োগের ব্যাপারে আমি চিঠি পাঠিয়েছি, আশাকরি খুব শীঘ্রই কাজ হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আমার তদারকিতে আছে। এরপরও যে সব কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে-থাকবে, সেগুলো আমি দায়িত্ব নিয়ে দেখব।
পূর্বকোণ/এমটি