পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মত চশমাপরা হনুমানের অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির পথে। চির সবুজ বনভূমি ধ্বংসের কারণে অনিন্দ্যসুন্দর এ বন্যপ্রাণীটি হারিয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক বানর ও হনুমান দেখা গেলেও বিরল প্রজাতির চশমাপরা হনুমানের বিচরণ রয়েছে জেলার রামগড়ে। চোখের চারপাশে গোল সাদা। ভ্রু, মুখের অনেকটা অংশ এবং দুই চোখের চারপাশে গোলাকার বৃত্তের মতো সাদা রং থাকায় এদের চশমা পরা হনুমান বলে। এদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ধূসর কালো রঙের। লোমশ শরীর।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০৮ সালে বিশ্বে বিপন্ন এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে চশমাপরা হনুমানকে। বন বাদাড় ধ্বংসের কারণে আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং খাদ্যের সন্ধানে চশমাপরা হনুমানের একটি বড় দল রামগড় পৌরসভার বিভিন্ন লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে ফলমূল ও গাছের কচিপাতা, কচিকাণ্ড খেতে এরা লোকালয়ের বাগানবাগিচায়
সদলবলে হানা দেয়। ১৭-১৮ সদস্যের চশমাপরা হনুমানের দলটি পৌরসভার ডেবারপাড়, জগন্নাথপাড়া, গর্জনতলী প্রভৃতি এলাকায় বিচরণ করে। মূলত খাবারের সন্ধানে এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বনজঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মত এরাও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মংপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাবে এ বিপন্ন প্রাণীর দল লোকালয়ে এসে আরও বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বাগানবাড়িতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের হাতে গুলতি, ইটপাটকেল ইত্যাদির আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আমার জানামতে রামগড়ে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে একাধিক চশমাপরা হনুমানের মৃত্যুও হয়েছে।’
বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী গবেষক প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু’র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চশমাপরা হনুমান দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বেশি সংখ্যায় আছে। তবে বাংলাদেশে এর সংখ্যা খুব বেশি নেই। সবুজ চিরহরিৎ বনের বাসিন্দা চশমাপরা হনুমান বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে। মুখপোড়া হনুমান, সাদা হনুমান ও চশমাপরা হনুমান এ তিন প্রজাতির হনুমান রয়েছে আমাদের দেশে। এরা উচ্চস্বরে ডাক দেয় ও ভয়ংকর শব্দ করে বিপদ সংকেত দেয়। অন্য প্রাণীরা তাদের এই শব্দকে ভয় পায়। খাদ্যাভ্যাস, প্রজনন ও বাচ্চা লালন-পালনে চশমাপরা হনুমান মানুষের চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই।
তৃণভোজী প্রাণী চশমাপরা হনুমান মাঝারি উচ্চতার গাছে বিচরণ করে আর গাছের কচি পাতা, ফল ও ফুল এদের প্রধান খাবার। বনের প্রতিবেশ রক্ষায় প্রাণীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন ধ্বংসসহ আমাদের নানা কর্মকাণ্ডের আবাসস্থল ধ্বংস ও খাদ্যাভাবের কারণে প্রকৃতির বন্ধু এ প্রাণীটি আজ মহাবিপন্ন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। এদের প্রতি এভাবে বিরুপ কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে অল্পদিনের মধ্যে প্রকৃতির ভারসাম্যরক্ষাকারী এ চশমাপরা হনুমান হয়তো বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশংকা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের।
পূর্বকোণ/এমটি