দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র ও কওমি মাদ্রাসাসমূহের জননী খ্যাত চট্টগ্রামের দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে ‘রাবেতাতুল মাদারিসিদ দিনিয়্যাহ আল মারকাজিয়্যাহ’ নামে একটি নতুন কওমি মাদ্রাসা বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
আজ রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টায় মাদ্রাসা মিলনায়তনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কওমি মাদ্রাসার প্রতিনিধিদের এক সম্মেলন থেকে নতুন এই বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সম্মেলনে বোর্ড গঠনের বিষয়ে মাদারেসে কওমিয়্যার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুরোধ আসে। বিশেষ করে গত ২২ জানুয়ারি দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার দারুল হাদীস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মাদারেসে কওমিয়ার প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রায় সকল প্রতিনিধিও জোরালোভাবে ‘রাবেতাতুল মাদারিসিদ দিনিয়্যাহ আল মারকাজিয়্যাহ’ নামে বোর্ড গঠনের বিষয়ে পরামর্শ দেন। তারই আলোকে উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারীর উলামায়ে কেরাম ‘রাবেতাতুল মাদারিসিদ দিনিয়্যাহ আল মারকাজিয়্যাহ’র একটি স্বতন্ত্র কার্যালয় প্রস্তুত এবং বোর্ডের একটি খসড়া কমিটি তৈরি করে। যা আজকের প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থাপন করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
সম্মেলনে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, আমাদের যিম্মাদারগণকে যেকোন মূল্যে কওমি মাদ্রাসাসমূহের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য এবং দারুল উলূম দেওবন্দের উসূলে হাশতেগানার নীতি-দর্শন বজায় রাখতে হবে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের মূখ্য উদ্দেশ্য থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইসলামী শিক্ষার বিস্তারসহ বহুমুখী দ্বীনি খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যাওয়া।
তিনি আরও বলেন, কওমি মাদ্রাসার যিম্মাদারগণকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষকদেরকে তাকওয়া ও প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখার পাশাপাশি ছাত্রদের শিক্ষার মান এবং আদব-আখলাক বজায় রাখার প্রতি গভীর মনোনিবেশ রাখতে হবে। কওমি মাদ্রাসাসমূহের ভিত্তিমূলই হচ্ছে, শিক্ষাদান, সে মতে অনুশীলন এবং তাকওয়া অর্জন। এতে নিজেদের সাথে সাথে সমাজ, কওম ও দেশ উপকৃত হবে।
মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, দ্বীনি কাজে সহযোগিতা হিসেবেই কওমি মাদ্রাসাসমূহের সকল ব্যয় নির্বাহ করেন সাধারণ মুসলমানগণ। কওমি উলামায়ে কেরাম দ্বীনের বহুমুখী খেদমতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন বলে তাদের সকল প্রয়োজন পূরণে কওম সবসময় পাশে থাকেন। সুতরাং কওমের চাহিদা ও প্রত্যাশার দিকেও আমাদেরকে যত্নবান থাকতে হবে। আমরা যদি নিজ নিজ দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলে নিবদ্ধ হয়ে পড়ি, তাহলে কওম এসব দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, এই সম্মেলনে উপস্থিত মাদারেসে কওমিয়্যার সম্মানিত প্রতিনিধিগণের গভীর প্রত্যাশা ও সমর্থনের মাধ্যমে ‘রাবেতাতুল মাদারিসিদ দিনিয়্যাহ আল মারকাজিয়্যাহ’র স্বপ্ন আলহামদুলিল্লাহ আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, আমাদের আকাবির-আসলাফ যাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাঁদের রেখে যাওয়া মহান দ্বীনি আমানতকে হেফাজতের পাশাপাশি উৎকর্ষতার উচ্চশিখরে নিয়ে যেতে আমাদের প্রত্যেকে যেন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারি- এ বিষয়ে আপনাদের সীসাঢালা ঐক্য, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা বিশেষভাবে জরুরি। সাথে সাথে দেওবন্দী মাসলাকে পরিচালিত আমাদের মাদারেসে কওমিয়ার উসূল, স্বতন্ত্র্যবৈশিষ্ট ও স্বকীয়তাবোধ বজায় রেখে তালিম ও তারবিয়াতি শিক্ষায় যাতে উত্তরোত্তর উন্নতিসাধন করা যায়, এ বিষয়ে আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাব।
দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ, আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, আল্লামা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট), মাওলানা ওসমান ফয়জী (মেখল), মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা আফজালুর রহমান (শর্শদী), মুফতি কাসেম নোমানী (ফেনী), মাওলানা তৈয়ব (ভোলা), মাওলানা আবদুল বারী (ঢাকা), মুফতি ওসমা (যশোর), মাওলানা মুনিরুল হক (সাতক্ষীরা), মাওলানা ইউনুস কাসেমী (মুন্সীগঞ্জ), মাওলানা মাকসুদ (মিরসরাই), মাওলানা মোস্তফা নূরী (কক্সবাজার), মাওলানা রফিক (নানুপুর), মুফতি ওমর ফারুক (মাদারিপুর), মাওলানা শামসুদ্দীন (শরাবাড়ী), মাওলানা নাসিরুদ্দীন (দিনাজপুর), মাওলানা আল আমিন (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা শিহাব উদ্দীন (শেরপুর) প্রমুখ।
পূর্বকোণ/খোরশেদ/জেইউ/পারভেজ