চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফেসবুক সূত্রে ১৮ বছর পর পরিবার খুঁজে পেল কুষ্টিয়ার সিরাজকে

টেকনাফ সংবাদদাতা

২৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:১৯ অপরাহ্ণ

পরিবারের সাথে অভিমান করে টেকনাফে চলে আসা কুষ্টিয়ার নাঈমুল প্রকাশ সিরাজ ১৮ বছর পর আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে টেকনাফের হ্নীলায় পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।

 

টানা ১৮ বছর ধরে বাড়ির সাথে তার ছিল না কোন যোগযোগ। এমনকি কারো সাথে যোগাযোগের কোন সুযোগই ছিল না। ছিল না কোন বাড়ির ফোন নম্বরও। সে শুধু বলতো নাম তার সিরাজ। মুখে কিছুটা জড়টা থাকায় কথাও তেমন স্পষ্ট ছিল না। তার পুরো নাম নাঈমুল সর্দার প্রকাশ সিরাজ।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৭ সালের শুরুর দিকে নাঈমুল প্রকাশ সিরাজ হ্নীলা স্টেশনে আসেন। সে সময় পরনে ছিল কেবল একটা লুঙ্গি। ভেতরে একটা হাফ প্যান্ট। গায়ে ছিল একট ছেঁড়া গেঞ্জি। স্টেশনের নাছিম মার্কেটস্থ কায়সার হার্ডওয়ারের মালিক জনৈক নুইন্যার দোকানের সামনে রাতযাপন করতো। সারাদিন মনের অজান্তে ঘুরতো, রাত হলে কায়সার হার্ডওয়ারের দোকানের সামনে ঘুমাতো। এভাবে কিছুদিন পর সিরাজ প্রকাশ নাঈমুল হ্নীলা স্টেশনে মালামাল লোড-আনলোডের কাজে যোগ দেন। এভাবে পার করলেন ১৮টি বছর। প্রতিদিন সে কাজ করতো। কাজের প্রতি তার ছিল আগ্রহ। সে আগ্রহ থেকে সিরাজ বছরের পর বছর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। সিরাজ ছিল অত্যন্ত অমায়িক এবং মিশুক প্রকৃতির। হ্নীলা স্টেশনের সবাই তাকে ভালোবাসতো। নাইমুল প্রকাশ সিরাজ হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়াস্থ এক বাড়িতে থাকতো। ওই বাড়িওয়ালাকে আয়ের পুরো টাকাই দিয়ে দিত। প্রয়োজনে লাগলে সে খুঁজে খরচের টাকা নিত।

 

গত ২ অক্টোবর ‘সিরাজ বাড়ি ফিরতে চায়’ মর্মে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন জসিম উদ্দিন টিপু নামে হ্নীলার একজন সংবাদকর্মী। পোস্টের মাত্র একদিনের ব্যবধানে ৩ শ বার শেয়ার হয়। শেয়ারের মাধ্যমে সিরাজ প্রকাশ নাঈমুলের পরিবার ছেলের অবস্থান জানতে পারেন। পরবর্তীতে পোস্টদাতা এডমিনের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ এবং ছোটকালের ছবি প্রদর্শন এবং শরীরের কয়েকটি চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হয়েছেন সিরাজ আসলেই তাদের সন্তান নাঈমুল। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী তার নাম নাঈমুল সর্দ্দার প্রকাশ সিরাজ। সে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বিভাগ গ্রামের মো. হোসেন সর্দ্দার ও মোছাম্মৎ স্বপ্না খাতুনের ছোট ছেলে।

 

আজ ২৬ অক্টোবর দুপুরে সিরাজকে পৈত্রিক বাড়িতে নিয়ে যেতে হ্নীলায় চলে আসেন আপন বড় ভাই সিঠুল সর্দ্দার ও তাদের আপন মামা শহিদুল ইসলাম। বড় ভাই এবং মামা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে সিরাজ এবং সিঠুল দু’ভাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। উপস্থিত লোকজন তাদের দুই ভাইয়ের আবেগপূর্ণ অবস্থা অবলোকন করেন। পরে হ্নীলা স্টেশনের ব্যবসায়ী, শ্রমিক সংগঠন এবং সিএনজি সমিতির নেতৃবৃন্দ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নাঈমুল সর্দ্দার প্রকাশ সিরাজকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাই এবং মামার হাতে তুলে দেন।

 

এদিকে সিরাজের ভাই এবং মামা এখানকার মানুষের ভালবাসা এবং সহযোগিতা দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা বলেন, হ্নীলা-টেকনাফের মানুষ অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ। জীবনে অনেক জায়গায় গিয়েছি। এমন অতিথি পরায়ণ লোক দেখিনি। তাদের সম্মান এবং আতিথেয়তা কখনো ভুলতে পারবো না।

 

 

পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট