চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

দুর্গাপূজায় টানা ছুটি : চেনা রূপে পর্যটননগরী

এরফান হোছাইন, কক্সবাজার

১২ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

শারদীয় দুর্গাপূজার চারদিনের ছুটিতে ভ্রমণপ্রেমীদের ঢলে প্রাণ ফিরে পেয়েছে পর্যটননগরী কক্সবাজার। বিশেষ করে গতকাল শুক্রবার পর্যটকদের ভিড় ছিল অন্যদিনের তুলনায় বেশি। গতকাল সকালে ঢাকা থেকে একটি বিশেষ ট্রেন ৬৩৪ জন যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে পৌঁছায়।

 

হোটেল-মোটেলগুলো প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে, সৈকতজুড়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠছেন পর্যটকরা। এর ফলে সৈকত যে শুধু জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাই নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার সকালে ও বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী, কলাতলি পয়েন্ট, ইনানীসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয় সিলেট থেকে আসা আনোয়ারুল করিম ও লুবনা আক্তার দম্পতির সঙ্গে। সরকারি চাকরিজীবী এই দম্পতি গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে এসেছেন। চারদিনের ছুটিতে তিনদিন তারা কক্সবাজার ঘুরে দেখবেন বলে জানান।

 

সুগন্ধা পয়েন্টে ঘুরতে আসা ঢাকার ছৈয়দ আবুল হোসেন পরিবারের ১৩ সদস্যকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি কক্সবাজারে এত লোকজন দেখতে পাবো। সৈকতে লাখো মানুষ! সত্যিই মন ভালো হয়ে গেছে।’ শনিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থান ঘুরবেন বলে জানান তিনি। এদিকে, দীর্ঘদিনের মন্দার পর কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা ফিরে পেয়েছে চেনা রূপ। জানা যায়, ১০-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৫-৯৯ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। আর ১৪-১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যটক টানতে প্রায় প্রতিটি হোটেল ৪০-৬০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়েছে। এছাড়া খাবারের মেনুতে যোগ করেছে নতুন আকর্ষণ। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান ইলিশ উৎসবে আট ধরনের ইলিশের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা।

 

দুর্গোৎসবে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় স্থানীয় অর্থনীতিতেও নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। সুগন্ধাস্থ বৃহত্তর ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, অনেকদিন পর টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার। সৈকতের পুরনো রূপে ফেরার একটি বড় সুযোগ এটি। ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম জানান, কক্সবাজারে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস রয়েছে প্রায় পাঁচশ। এসব আবাসনে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারকা হোটেলগুলোয় ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। গেস্ট হাউসগুলোয়ও কমবেশি বুকিং হয়েছে। দুর্গাপূজার ছুটি দিয়ে এবারের পর্যটন মৌসুমটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।

 

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদারের বলেন, এবারের শারদীয় ছুটি আমাদের জন্য বড় ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। সাতদিনব্যাপী লাখো পর্যটকের আগমনে পুরো পর্যটনখাত চাঙ্গা হবে এবং কয়েকশ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করছি। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দুর্গাপূজার ছুটিতে পর্যটকদের যে ঢল নেমেছে, তা কক্সবাজারের পর্যটনখাতকে সাময়িকভাবে চাঙ্গা করলেও দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, কক্সবাজারের পর্যটন থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, তার তুলনায় পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুবই কম। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন পর্যটনস্পট তৈরি করা ও বিদ্যমানগুলোকে আরও আধুনিকীকরণ জরুরি।

 

অন্যদিকে, কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের এসপি মাহফুজুল ইসলাম জানান, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা নিরবচ্ছিন্ন টহল দিচ্ছেন। এছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সৈকতের বিভিন্ন এলাকা নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘœ করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পের প্রসারই আমাদের মূল লক্ষ্য।

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট