ভাটা পড়লেই দুর্ভোগে পড়ে যান সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপের লাখ লাখ যাত্রী। এসময় কাদা-পানি মাড়িয়ে শাড়ি-কাপড় ভিজিয়ে নৌকায় উঠতে হয় তাদের। প্রতিদিন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় এ থেকে মুক্তি পেতে অস্থায়ী ড্রাম ব্রিজসহ নানা উপায় বের করলেও তাতে স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি। এতে হতাশ দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের লাখ লাখ মানুষ।
সরেজমিনে সন্দ্বীপ থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুট সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ও সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট গিয়ে দেখা গেছে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ রুটের যাত্রীরা।
যাত্রীরা জানান, দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে যাত্রীদেরকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা, বাঁশবাড়িয়াসহ ছয়টি ঘাটে এসে দেশের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হতেন যাত্রীরা। কিন্তু এখন তিনটি রুট চালু আছে। এসব রুটে এসে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান যাত্রীরা। কিন্তু এই সাগর পথে এই ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া সহজ নয়। সাগরে প্রতিনিয়ত নানান বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত সাগরে নিম্মচাপ, বর্ষার উত্তাল ঢেউসহ মাঝে মধ্যেই এ পথ হয়ে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও চাকুরি, ব্যবসা, পড়াশুনা, জরুরি চিকিৎসাসহ নানান কারণে ঝুঁকি জেনেও প্রতিনিয়ত এ রুটে চলাচল করেন হাজার হাজার যাত্রী।
সূত্র জানায়, ভৌগোলিক অবস্থান ও তুলনামূলক অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে এসব ঘাটের মধ্যে সীতাকুণ্ডের গুপ্তছড়া টু সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফেরিঘাট সবচেয়ে জনবহুল। এ রুটে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করেন। জনবহুল কুমিরা ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রী দুর্ভোগ ছিলো একটি নিয়মিত ঘটনা। ভাটার সময় নৌযানগুলো সাগরের খালে এসে আটকে পড়ত। ফলে যাত্রীরা ইঞ্জিন নৌকা বা স্পিড বোটে উঠতে গেলে কাদা ও কোমর পানিতে ভিজতে হতো।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠা দ্বীপবাসীর বারংবার দাবির প্রেক্ষিতে যাত্রী ওঠানামার সুবিধার জন্য বিআইডব্লিউটি্এর উদ্যোগে ২০১২ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আরসিসি জেটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের প্রায় ছয় বছর পর সন্দ্বীপ অংশে নদী ভাঙনের কারণে জেটির এক তৃতীয়াংশ ভেঙে পানিতে চলে যায়। পরে সেখানে কাঠ দিয়ে অস্থায়ী ব্রিজ করা হয়। ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে গুপ্তছড়া অংশে শুরু হয় আরেকটি জেটির নির্মাণ কাজ। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে যাত্রী ছাউনি, শৌচাগারসহ শিশুদের জন্য ব্রেস্টফিডিং রুমের ব্যবস্থাসহ ২ হাজার ৬৬৫ বর্গমিটার দৈর্ঘ্যরে নতুন একটি জেটি নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু জেটি নির্মাণের আগেই নদীতে চর জমতে শুরু করে। ফলে নতুন জেটি সত্তেও ভাটার সময় যাত্রীরা কোমর পানিতে ওঠানামা করতে হতো আগের মতোই। এখানেও ইজারাদারের পক্ষ থেকে একাধিকবার কাঠের ব্রিজ করা হয় যাত্রী দুর্ভোগ দূর করতে। যাত্রী ওঠানামার সুবিধার জন্য গত কয়েক বছর ধরে বিআইডব্লিউটি্এ গুপ্তছড়া অংশে ড্রেজিং করে আসছিলো। ড্রেজিং করার কিছুদিনের মধ্যেই আবার পলি ভরাটের কারণে তার কোন দীর্ঘস্থায়ী সুফল মেলেনি। উল্টো ড্রেজিং করার সময় কাঠের ব্রিজ ভেঙে ফেলায় দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এই দুর্ভোগ কমাতে ইজারাদারের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে সন্দ্বীপ অংশে ড্রাম দিয়ে ১২০ ফুটওয়ে ব্রিজ তৈরি করা হয়। কিন্তু জোয়ার ভাটার অতিরিক্ত স্রোতের কারণে সেগুলো সরে গিয়েছে। এতেও আশানুরূপ ফল মেলেনি।
সন্দ্বীপ মুছাপুরের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন বলেন, কোনভাবেই যেন পানিতে নেমে নৌকায় উঠার দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি মিলছে না। কাদা ও পানিতে মাখামাখি করে ওঠতে হয় আমাদের। জটিল রোগী, গর্ভবতী মা, অসুস্থ শিশু সবার ক্ষেতেই একই অবস্থা। সর্বশেষ ব্যবস্থা ছিলো ড্রামের ব্রিজ। এটিও জোয়ারে ভেঙে এখন আর কাজে আসে না।
কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটের বিআইডব্লিউটি্এ’র ইজারাদার জগলুল হোসেন নয়ন বলেন, জোয়ারের সময় নৌকা বা স্পিডবোট সরাসরি আরসিসি জেটিতে লেগে যায়। জোয়ার কম থাকলে বা ভাটার সময় যাত্রীরা যাতে কাদা পানিতে নামতে না হয় সেজন্য আমরা ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রাম ও লোহার এঙ্গেল দিয়ে ১২০ ফুট ফুটওয়্যার ব্রিজ তৈরি করেছি। এখন নতুন প্রায় ২০০ ফুট চর জমেছে। যাত্রী ওঠানামার কষ্ট কমাতে এবার বিআইডব্লিউটি্এ’র পক্ষ থেকে নতুন করে পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটি্এ’র বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, সমস্যা সমাধানে গুপ্তছড়া অংশে নতুন করে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০ ফুট লম্বা অস্থায়ী কাঠের ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী দুইদিনের মধ্যে। হয়ত এতে কিছুটা দুর্ভোগ কমে আসবে।
পূর্বকোণ/এএইচ