চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

কক্সবাজারে সাংবাদিকদের উপর আ.লীগ-ছাত্রলীগের হামলা

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১৭ জুলাই, ২০২৪ | ১১:০৩ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের  হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদিকরা। এ সময় অন্তত পাঁচ সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন।

 

বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার শহরের লালদীঘিরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

 

হামলার শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন- দেশ টেলিভিশনের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সৌরভ দেব, একাত্তর টিভির ক্যামেরাপার্সন হেলাল উদ্দিন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সিসিএন ও দেশবিদেশের মিশু দাশ গুপ্তসহ অনেকেই। এ সময় অনেকেই হুমকি পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে দৈনিক আজাদীর কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি আজিজ রাসেল ও দৈনিক পূর্বকোণের জেলা প্রতিনিধি এরফান হোছাইন।

 

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দর সড়ক থেকে কিছু সংখ্যক আন্দোলনকারী মিছিল সহকারে প্রধান সড়কে উঠে বাজারঘটার দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহিদ দৌলত ময়দানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে আন্দোলনকারীদের। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন সাংবাদিকরা। তখন সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা করে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

সাংবাদিকদের মারধর করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বোরহান উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী। মারধরের একপর্যায়ে দৈনিক আজাদীর জেলা প্রতিনিধি আজিজ রাসেলকে অস্ত্র প্রদর্শন করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান যুবলীগ নেতা।

 

এছাড়া গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত ৯ টায় শহীদ স্মরণি সড়কে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ভাংচুরসহ লুঠপাট করে। পরে মিছিল সহকারে গুনগাছতলা হয়ে লালদীঘি যাওয়ার পথে দৈনিক পূর্বকোণ ও বিডি সমাচারের সাংবাদিক এরফান হোছাইন ফোনে হামলাকারীদের মিছিলের ভিডিও করতে চাইলে ৫-৬ জন তেড়ে আসে।

 

হামলার শিকার স্থানীয় সাংবাদিক মিশুগুপ্ত বলেন, রেস্টুরেন্টে বসা এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (টমটম) চালককে মারধরের ভিডিও ধারণের সময় ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন খোকন মোবাইল কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ও আমাকে হাতে ও পায়ে আঘাত করে। এ সময় আশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

 

রিপোটার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক এম ওসমান গনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে যখন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিলো তখন আমাদের সহকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দ্রুত সময়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

 

হামলার শিকার দেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সৌরভ দেব বলেন, মূলত আমরা সংবাদ সংগ্রহে যাই। সেখনে একজন টমটম চালকের উপর অমানবিক হামলা হতে দেখে আমরা এগিয়ে যাই। এ সময় আমাদের উপরও দেখেশুনে লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করা হয়।

 

একাত্তর টিভির ক্যামেরাপার্সন হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি যখন ভিডিও করছিলাম তখন আমার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ক্যামেরা ভাঙচুর করার চেষ্টা চালিয়েছে। এ সময় আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে।

 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেছি। অভিযোগ পেলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি (এসপিতে সুপারিশপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়টি দুঃখজনক। হামলার সময় পুলিশের টিম উপস্থিত থাকায় বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে যারা মিডিয়া কর্মীদের উপর হামলা করেছে সিসিটিভি ফুটেজ ও ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট