ঢাকা-কক্সবাজার এবং কক্সবাজার-ঢাকা আপ ও ডাউন ট্রেনকে ইসলামাবাদ (আইএসবি) স্টেশনে থামিয়ে যাত্রী লোড-আনলোডের যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (৩০ জুন) জনস্বার্থে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে এ আইনি নোটিশটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নুরুল আজিম।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব), চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার ও চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেড (পূর্ব) এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের পরিচালকের নিকট নোটিশটি প্রেরণ করা হয়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম প্রিয় পর্যটন জেলা হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেন। মহাসড়কে প্রচুর যানজটের কারণে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে অনেক সময় প্রায় ১২-১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। অধিকন্তু, বাংলাদেশের রেল পরিবহন পরিষেবার তুলনায় সড়কপথে বাস যাত্রা অনিরাপদ এবং ব্যয়বহুল। রেলপথে যাত্রা নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় রেল পরিবহন দেশের অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন পরিবহনে পরিণত হয়েছে। তাই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে কক্সবাজার জেলাকে বাংলাদেশ রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য অনেক বিক্ষোভ হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারসহ বিভিন্ন সরকার রেললাইন নির্মাণের জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালালেও সব ব্যর্থ হয়। অবশেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রেললাইন নির্মাণ শেষে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর তিনি তা উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এ পথে রেল অত্যন্ত সফলভাবে চলছে এবং এটি যাত্রী পরিবহনের অন্যতম প্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ইসলামাবাদ রেলওয়ে স্টেশনটি কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার অধীনে অবস্থিত। এটি প্রায় দুই লাখ জনঅধ্যুষিত উপজেলা। এর ঈদগাঁও বাজার চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যতম বিখ্যাত ও বৃহত্তম বাজার হিসেবে পরিচিত এবং এখান থেকে সরকার প্রতি বছর খাস সংগ্রহের মাধ্যমে বিপুল রাজস্ব আয় করে থাকে। তাই ঈদগাঁওয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) ঈদগাঁওকে থানা হিসাবে ঘোষণা ও প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে, ২০২১ সালের ২৬ জুলাই একই কমিটি কক্সবাজার সদর উপজেলার উত্তরের পাঁচটি ইউনিয়ন যথা ইসলামপুর, পোকখালী, ইসলামাবাদ, ঈদগাঁও এবং জালালাবাদ ইউনিয়ন নিয়ে ঈদগাঁওকে একটি উপজেলায় উন্নীত করে। একইভাবে ঈদগাঁওকে নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। এ প্রকল্পে নবনির্মিত নয়টি ট্রেন স্টেশনের মধ্যে একটি হলো ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ (আইএসবি)স্টেশন।
জানতে চাইলে ব্যারিস্টার নুরুল আজিম বলেন, ইসলামাবাদ (আইএসবি) স্টেশনটি পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে দুজন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ করা হয়েছে কিন্তু স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। ফলে উপজেলাবাসীর শত বছরের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদেরকে ইসলামাবাদ স্টেশনের উপর দিয়ে ৩৩ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার স্টেশনে গিয়ে নামতে হয়। একইভাবে ঢাকার জন্য ট্রেন ধরতে হলে কক্সবাজার যেতে হয়। ফলে ঈদগাঁও উপজেলার যাত্রীদেরকে অতিরিক্ত ৬৬ কিলোমিটার যাত্রা করতে হয় যা চরম ভোগান্তি।
ঈদগাঁওয়ে দুই লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে এবং ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে তাদের কক্সবাজার থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাতায়াত করতে হয়। তবে ইসলামাবাদ (আইএসবি) স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না বলে ট্রেন পরিষেবার সুবিধা থেকে জনসাধারণ ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া, এ স্টেশনে ট্রেন থামলে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করতে পারে। তাই, ঢাকা-কক্সবাজার এবং কক্সবাজার-ঢাকা উভয় আপ ও ডাউন ট্রেনকে ইসলামাবাদ (আইএসবি) স্টেশনে থামিয়ে যাত্রী লোড-আনলোড করার প্রয়োজনে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। আইনি নোটিশ প্রাপ্তির সাতদিনের মধ্যে ইসলামাবাদ (আইএসবি) স্টেশনে রেল থামার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, স্টেশনটিতে ট্রেন থামানো দরকার কিনা কেউ জানায়নি। এখনো কোনো নোটিশও পাইনি। নোটিশ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্বকোণ/তারেক/জেইউ/পারভেজ