চট্টগ্রাম রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪

সীমান্ত থেকে সরে গেছে মিয়ানমারের যুদ্ধ জাহাজ

টেকনাফ সংবাদদাতা

১৫ জুন, ২০২৪ | ১০:১৬ অপরাহ্ণ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের আশপাশে গোলাগুলি এবং মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ থেমে গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা গতকাল শুক্রবার ভোররাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে এ ধরনের আর কোনো শব্দ শুনতে পাননি। এদিকে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থানরত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজটি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে দেখা যাচ্ছে না।

 

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সারা রাত বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুরো টেকনাফ। শান্তিতে লোকজন ঘুমাতে পারেনি। তবে শুক্রবার ভোররাত থেকে শনিবার পর্যন্ত আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। নতুন করে যাতে সীমান্ত পেরিয়ে কোনো লোক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।

 

সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার ভোররাত থেকে আর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে দ্বীপে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। কখন থেকে তাঁরা আগের নৌপথে (টেকনাফ-সেন্টমার্টিন) যাতায়ত করতে পারবে, সেটি নিয়ে দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষ চিন্তিত রয়েছেন। কারণ, বর্তমানে পথেই চলাচল করা হচ্ছে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের শাহপরীরদ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় দুই দিন ধরে অবস্থান করা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি সেখান থেকে সরে গেছে। যুদ্ধজাহাজটি পরে মিয়ানমারের জলসীমানায় অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংদিয়া অংশে অবস্থান করছিল।

 

স্থানীয়দের বরাতে সন্ধ্যার পর সে স্থান থেকেও সরে গেছে বলে নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি এসব তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে বড় জাহাজটি অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি একের পর এক মিয়ানমার থেকে সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ জন্য আপাতত এ নৌপথ দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাতায়ত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সার্ভিস ট্রলারগুলো বিকল্প পথ সাগর উপকূলীয় পথেই সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে।

 

সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন বলেন, সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলিবর্ষণের ফলে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। এ ছাড়া সীমান্তের ওপারের যেসব এলাকায় এখন গোলাগুলি চলছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে।

 

শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা মো. আমিন বলেন, পরিস্থিতি আগের তুলনায় শান্ত। তবে যদি সেখানে বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হয়, আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে।

 

শাহপরীরদ্বীপ বাজারপাড়া দোকানদার আব্দুস শুক্কুর বলেন, এখানে কয়েক দিন ধরে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে সীমান্তে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।

 

স্থানীয় জেলে মোহাম্মদ আলম বলেন, নাফ নদীর চরে আগে জাকি (ঝাঁকি) জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারতাম। মিয়ানমার সীমান্তের উত্তেজনার কারণে আমরা কয়েক দিন ধরে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। ফলে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

 

সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান খান বলেন, যুদ্ধজাহাজগুলো নাফনদীর নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে সরিয়ে সেন্টমার্টিনদ্বীপের অদূরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এতে দ্বীপ বাসীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

 

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা সাড়ে তিন মাস মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দুটি শহরসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্ত চৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে। এখন মংডু দখলের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

 

 

পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট