চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

মিরসরাই সংবাদদাতা

৩ জুন, ২০২৪ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

হতভাগ্য এক মা জেসমিন আক্তার। নিজের দাম্পত্য জীবনের প্রথম সন্তান জন্মের প্রক্রিয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ঘটলো চাঞ্চল্যকর ও বেদানাদায়ক এক নির্মম ঘটনা। মাত্র সাড়ে ৫ মাস সময়ে গর্ভপাত হওয়া (অপরিণত) নবজাতককে মৃত ঘোষণার পর কার্টুনে পেছিয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ওই নবজাতকের মরদেহ করব দিতে গেলে শিশুটি কেঁদে উঠে। পরে দ্রুত শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানোর ২০ ঘণ্টা পর হতভাগ্য ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়।

 

রবিবার (২ জুন) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের এ ঘটনা পরে রূপ নেয় বেদনায়।

জানা গেছে, মিরসরাইয়ে মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মো. ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার ১ জুন (শনিবার) রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এতে রিপোর্ট ভালো না বলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলা হয় জেসমিনকে। ভর্তি হওয়ার পর ওই দিন দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টায় অপারেশন থিয়েটারে জেসমিনের স্বাভাবিক গর্ভপাত হয়। পরে ২০ মিনিট পর্যবেক্ষণের পর কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসক নবজাতকটি মারা যায় বলে স্বজনদের জানায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি কাগজের কার্টুনে দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে নবজাতককে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়। পরিবারের লোকজন ওই নবজাতককে কবর দিতে গেলে গেলে হঠাৎ কান্নার শব্দ পায়। পরে কার্টন খুলে দেখে নবজাতক তার হাত পা নাড়াচ্ছে। পরে তারা দ্রুত ওই নবজাতককে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। ভর্তির ২০ ঘণ্টা পর নবজাতকটি মারা যায়।

 

নবজাতকের মা জেসমিন আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমি নিয়মিত মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতাম। সর্বশেষ গত ১ জুন সকালে আমার রক্তপাত শুরু হলে পুনরায় চিকিৎকের কাছে যাই। সেখানে তারা আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে আমাকে ভর্তি হতে বলি। ভর্তি হওয়ার পর তারা আমাকে ব্যাথানাশক ইনজেশন দেয়ার কথা বলে মূলত গর্ভপাতের জন্য ওষুধ পুশ করেছে।’

 

জেসমিন আরও অভিযোগ করেন, ‘আমাকে ওটিতে নিয়ে যায় আনুমানিক সকাল ৯টায়। সারাদিন আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। তারা আমাকে জোর করে ডেলিভারি করিয়েছে। ওরা আমাকে বলছে আপনার বাচ্চা নেই। ডেলিভারির পর আমার জ্ঞান ছিলো, আমি দেখি যে একটা জলজ্যান্ত বাচ্চা। আমি তাদেরকে বলছি বাচ্চাটা আমার পাশে রাখেন, বাচ্চা মারা গেলে আমার পাশে মারা যাবে। আমি তাদেরকে বলি যে, আইসিইউতে হলেও আপনারা চেষ্টা করেন। তখন ডা. শারমিন আয়েশা আমাকে শান্তনা না দিয়ে উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়।’

 

এদিকে জেসমিনের স্বজনরা দাবি করেন, বাচ্চাটি যখন কবর দেয়ার করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন হঠাৎ একটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। প্রথমে ভেবেছিলাম কোন পশুপাখির ডাক। পরবর্তী আবার যখন একই আওয়াজ শুনি তখন আমরা কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা জীবিত। কার্টনের ভিতরে পশ্রাব-পায়খানাও ছিল।

 

হাসপাতালের কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসক ডা. শারমিন আয়েশা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখি তার জরায়ুমুখ খুলে বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। তখন ইনজেকশন দিয়ে জরায়ুমুখ বন্ধ এবং ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করি। সাধারণত ২৮ সপ্তাহ হলে বাচ্চা ডেলিভারি করা সম্ভব হয়। তবে ২২ সপ্তাহ হওয়ায় পরিবারের সাথে কথা বলে গর্ভপাত করা হয়। স্বাভাবিক গর্ভপাতের পর বাচ্চাটি দুই হাত দুই পা নড়াছড়া করে। এরপর প্রায় ২০ মিনিট আমার অবজারবেশনে রাখা হয়। পরে এটিকে একটি কার্টনে রাখা হয়। আমরা তাদেরকে কোন ডেথ সার্টিফিকেট দিই নাই। কবর দিতে বলি নাই।’

 

যোগাযোগ করা হলে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘রোগীর অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণের কারণে গতকাল শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াছড়া ছিল। ১৫ মিনিট নবজাতককে চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। রোগীর স্বজনরা নবজাতককে দেখতে আসে এবং হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায়।’

 

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ট হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট