সীতাকুণ্ডে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গাছ পালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ তিনদিন ধরে অন্ধকারে আছেন। আর বিদ্যুৎ না থাকায় বহু বাড়ি ঘরে পানি তোলতে না পারায় রান্না-বান্না বন্ধ, চার্জ দেয়া যাচ্ছে না মোবাইলে, বন্ধ হয়ে আছে ফ্রিজ। এছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ চতুর্মুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন উপকূলবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রবিবার ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই একের পর এক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হতে শুরু করে। এরমধ্যে সোমবারও সারাদিন রাত ঝড়-বৃষ্টি অব্যাহত থাক্য়া বহু গাছ পালা এবং একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। ফলে সীতাকুণ্ড পৌরসদরসহ সৈয়দপুর ইউনিয়ন, মুরাদপুর ইউনিয়ন, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে মঙ্গলবার (গতকাল) দুপুরের দিকে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও তা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হচ্ছিল না। এছাড়া সৈয়দপুর ইউনিয়ন, মুরাদপুর ইউনিয়ন, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় অন্ধকারে বাস করছেন।
সৈয়দপুরের ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, রবিবার থেকে পুরো এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। পুরো এলাকায় অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ কর্মীরা কাজ চালিয়ে গিয়েও সংযোগ দিতে পারছে না। মুরাদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাহার বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমরা গোসল, রান্না-বান্না কিছুই করতে পারছি না। মোবাইল, ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামলেই পুরো গ্রাম ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। বারবার বিদ্যুৎ অফিসে কল করেও কোন সুরাহা হচ্ছে না।
কুমিরার ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, কুমিরা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক পরিবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। একদিকে পানিতে তলিয়ে আবার অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় তারা সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছে। আমরাও বিদ্যুৎ সংকটে কোন কাজই করতে পারছি না। এখনো বুঝতে পারছি না কখন এ সমস্যা সমাধান হবে। বিদ্যুৎ সংকটে পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড পৌরসদরের ও নামার বাজারের বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী অনন্যা বড়ুয়া। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ তিনদিন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছি। পড়াশুনা, কাজকর্ম সব ব্যাহত হচ্ছিল। মঙ্গলবার (গতকাল) দুপুরে একটু বিদ্যুৎ আসলেও কিছুক্ষণ পরপর আবারো চলে যাচ্ছিল।
চরম দুরাবস্থার কথা জানান, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে.এম রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পুরো উপজেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। ব্যাকআপ দিতে না পেরে আমার আইপিএস বন্ধ হয়ে ল্যাপটপ, মোবাইলও চার্জ শূন্য হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বাড়বকুণ্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেয়াজুল হক বলেন, আসলে সবখানেই গাছ পালা ভেঙে পড়েছে। বাঁশবাড়িয়ায় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও ভেঙে গেছে। তাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। তবে আমরা কাজ করে ইতিমধ্যে অনেকটা সমাধান করেছি। অবশিষ্ট কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসবে।
পূর্বকোণ/এসএ