চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

কক্সবাজার সংবাদদাতা

২৭ মে, ২০২৪ | ১০:৫১ অপরাহ্ণ

গত রাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ঝড়ের তীব্রতায় একজন আহত হয়েছেন। বাসস্থান ও ফসলের ক্ষতি, বিদ্যুৎহীন এবং ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

 

সোমবার (২৭ মে) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও গৃহীত কার্যক্রমের এ তথ্য জানানো হয়।

 

ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেতের পরিবর্তে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

 

পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। তন্মধ্যে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৭৮৭ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। আশ্রিতদের মাঝে রান্না করা খাবারসহ শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পরিবেশন করা হয়েছে। ১১টি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে আশ্রিতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে।

 

ঝড়ের সময় মহেশখালী উপজেলার এক বৃদ্ধ গাছের ডাল পড়ে আহত হয়েছেন। তিনি কুতুবজুম ইউনিয়নে ঘটিভাঙা ডেম্বনিপাড়া এলাকার আবুল ফয়েজের ছেলে আবুল কালাম (৭৫)। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

ঝড়ের তীব্রতায় কক্সবাজার পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড এবং মহেশখালী পৌরসভার চরপাড়া এলাকায় মাটির বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এছাড়া এখনও কক্সবাজারে বাতাসের তীব্রতা এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি রয়েছে।

 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঝড়ের ফলে ব্যাপক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, শহরের নিম্নাঞ্চল, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, বড়বাজার, টেকপাড়া, কালুর দোকান, তারাবানিয়ার ছড়া, নুর পাড়া, সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, পাহাড়তলী, কুতুবদিয়াপাড়া ও হোটেল মোটেল জোন সহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। খুরুশকুল ও চৌফলদণ্ডীতে বাতাসের তীব্রতায় অনেক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে এবং ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৬৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৩টি কাঁচা ঘরের পরিবারদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

 

ঝড়ের সতর্কতা সংকেত নামিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন স্ব স্ব গৃহে ফিরে যাচ্ছেন।

 

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা ঘরের পরিবারদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি জেলা, উপজেলা, স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পেরে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২৫ মে বিকাল ৫টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন রাত ৮টার মধ্যে সকল উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

এই সভাগুলোতে ঝড় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় এবং সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

জেলা প্রশাসন আরও জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রমে দ্রুত গতি আনবে। কৃষি বিভাগ ফসলের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেবে।

 

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে জনসাধারণের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন