নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে পটিয়া উপজেলায়। প্রার্থীদের সমঝোতা বৈঠক থেকেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে। ভোটের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসতেই বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। উত্তর-পশ্চিমাংশের পাঁচ ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক প্রার্থী।
এদিকে, বোয়ালখালীতে বিএনপির ভোটারদের নিয়ে টেনশনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। তিন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে প্রকাশ্যে কাজ করছেন বিএনপির ২০-৩০ জন নেতা। অপ্রকাশ্যে আছেন আরও অন্তত ১০ জন শীর্ষ নেতা।
আগামী ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ধাপে পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন ৫১ জন। এর মধ্যে চন্দনাইশ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেদা আকতার চৌধুরী একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১২ জন।
নির্বাচনের ক্ষণগণনা ফুরিয়ে এসেছে। শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ ও পথসভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। চার উপজেলার মধ্যে তিন উপজেলার ভোটাররা আতঙ্ক ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
পটিয়ায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস) এবং নগর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল আলম (দোয়াত-কলম)। প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই পটিয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য এবং বহিরাগত ও সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এখন ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার অনুসারী বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে পটিয়ায়। বহিরাগতদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার আশিয়া, কাশিয়াইশ, জিরি, কোলাগাঁও, হাবিলাসদ্বীপ- পাঁচ ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র দখল ও জালভোটের আশঙ্কা করছেন এক প্রার্থীর সমর্থকেরা।
বোয়ালখালীতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী (মোটরসাইকেল), সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা (দোয়াত-কলম), জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহেদুল হক (হেলিকপ্টার), পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম শফি (ঘোড়া), এসএম সেলিম (কাপ-পিরিচ), মোহাম্মদ শফিক (আনারস) ও শ্রমিক লীগ নেতা এস এম নূরুল ইসলাম (টেলিফোন)।
জাহেদুল হক, শফিউল আলম ও মোহাম্মদ শফিককে ঘিরে মাঠে নেমেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা। রেজাউল করিম বলেন, ভোট ও রাজনীতি নয়, টাকার লোভে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতারা। জেলা পর্যায়ের এক শীর্ষ নেতা স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গোপন বৈঠক করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ভোটে নাশকতা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতেই মাঠে নেমেছে বিএনপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনীতির হাওয়া পাল্টে যায় আনোয়ারায়। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানকে ঘিরে দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে আনোয়ারা আওয়ামী লীগ। দুই পক্ষই দুই প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে ভোটের মাঠে সরব রয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা পরিবর্তন করে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীকে (দোয়াত-কলম) প্রার্থী ঘোষণা করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরীকে (মোটরসাইকেল) নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আর অর্থ প্রতিমন্ত্রীর গ্রুপ কাজী মোজাম্মেল হককে (আনারস) নিয়ে মাঠে রয়েছেন। ভোট তৌহিদ ও মোজাম্মেলের হলেও নির্বাচন সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর