চট্টগ্রামের ২২ চা বাগানে তিন মাসে উৎপাদন সাড়ে ৭ লাখ কেজি চা
চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানের ১৭টির অবস্থান ফটিকছড়ি উপজেলাতে। রাঙ্গুনিয়ায় ৩টি এবং কাপ্তাই ও বাঁশখালি উপজেলায় ১টি করে চা বাগান রয়েছে। ফলে মোট চা উৎপাদনের বেশির ভাগই আসে ফটিকছড়ি থেকে। চলতি বছর চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা। ২০২৩ সালে সমপরিমাণ চা বাগান হতে উৎপাদন হয়েছিলো ১ কোটি ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮৩ কেজি এবং ২০২২ সালে ১ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার ২৯ কেজি চা। জানা গেছে, ২০২২ ও ২৩ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম চা উৎপাদন হয়েছিলো এবং চলতি বছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবেনা বলে ধারণা করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা।
কেন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে? এমন প্রশ্নে বাগান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর প্রধান কারণ সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়াই। এর ফলে খরা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দেয়, অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে কৃত্রিম সেচে বিঘ্ন ঘটে। সর্বপরি শ্রমিক অসন্তোষ ইত্যাদির কারণে বাগানের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। ২০২০ সালে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিশ^ চা দিবস পালন করে। দেশের জাতীয় জিডিপিতে এ খাতের অবদান শূণ্য দশমিক ৮১ শতাংশ। যার একটি অংশ আসে চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগান হতে। যেখানে স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ১৭ হাজার ৯৩১ জন শ্রমিকের।
মূলতঃ ক্লোন এবং বাই ক্লোন জাত হতে চট্টগ্রামে চা উৎপাদন হয়ে থাকে। চট্টগ্রামের বাগান হতেই অয়েল গ্রিন টি, সিলডার নিডল হোয়াইট টি, গোল্ডেন আই ব্রো অর্থডক্স টি ও সিটিসি ব্লেক টি নামের চার ধরণের চা উৎপাদিত হচ্ছে। যার মধ্যে সিলডার নিডল হোয়াইট টি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা যায়।
সর্বপরি চা বাগান মালিকরা মনে করছেন পরিত্যক্ত সরকারি খাস জমিগুলি বাগানের আওতায় আনা গেলে এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ হতো। এদিকে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে বাগান শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে ফটিকছড়ি উপজেলার রামগড় চা বাগানের শ্রমিকরা বাগান ম্যানেজারের উপর হামলা করে ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় আহত ম্যানেজার ভূজপুর থানায় দুই চা শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা যায়। শ্রমিক অসন্তোষ বাগানের উৎপাদন ব্যাহত হবার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বাগান সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের (২০২৪) এপ্রিল মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগান হতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬০ কেজি চা। যা গতবছর (২০২৩) সালে ছিলো ৭ লাখ ২৩ হাজার ৮১৩ কেজি। চলতি বছরে বেশি হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৭ কেজি চা।
২২টি চা বাগানের গত জানুয়ারি হতে এপ্রিল মাস অর্থাৎ ৩ মাসের উৎপাদন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলার ১৭টি চা বাগান যথাক্রমে আন্ধারমানিক টি স্টেটে উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৭৪ কেজি। বারোমাসিয়া টি স্টেটে ৭৫ হাজার ১২৩ কেজি। দাঁতমারা টি স্টেটে ৪ হাজার ৫৯৬ কেজি। এলাহিনূর টি স্টেটে ২০ হাজার ১৬৮ কেজি। হালদা ভ্যালি টি স্টেটে ৭৩ হাজার ১৭৫ কেজি। কর্ণফুলি টি স্টেটে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪ কেজি। কইয়াছরা ডলু টি স্টেটে ৭ হাজার ৪৮০কেজি। মা জান টি স্টেটে ১১ হাজার ৬৭৩কেজি। মোহাম্মদ নগর টি স্টেটে ৫ হাজার ১০৫কেজি। নাসিয়া টি স্টেটে ৫ হাজার ১১২ কেজি। নেপচুন টি স্টেটে ৬৭ হাজার ৫১৪ কেজি। নিউ দাঁতমারা টি স্টেটে ১৭হাজার ৬৪৯কেজি। উদালিয়া টি স্টেটে ৫২ হাজার ৮৮৭ কেজি। পঞ্চবটি টি স্টেটে ২৫ হাজার ৮০৪কেজি। রামগড় টি স্টেটে ৫২ হাজার ৩৮৬কেজি। আছিয়া টি স্টেটে ১৭ হাজার ৭৯৬ কেজি। রাঙ্গাপানি টি স্টেটে ২৭ হাজার ৪৬৪কেজি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আগুনিয়া টি স্টেটে ৪৮৬ কেজি, কোদালা টি স্টেটে ২২ হাজার ৮৭৬ কেজি ও ঠান্ডাছড়ি টি স্টেটে কোন উৎপাদন দেখা যায়নি। বাঁশখালি উপজেলার চাঁদপুর টি স্টেটে ১৩ হাজার ১০৫ কেজি এবং কাপ্তাই উপজেলার ওয়া¹াছড়া টি স্টেটে ৯ ৪৭ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ও বোয়ালখালি উপজেলার চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগান ম্যানেজার মুহাম্মদ আবুল বশর জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে চায়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। চা শিল্পে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত আনতে হলে আরো বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। যত বিনিয়োগ হবে চা শিল্প প্রসার হবে, প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে। পরিত্যক্ত সরকারি খাস জমি গুলি বাগানের আওতায় আনা গেলে এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ হবে।
পূর্বকোণ/পিআর