সীতাকুণ্ডে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭-৮ টাকায়। এই মূল্যে বিক্রি করলে ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত শ্রমিক মুজুরি ও পরিবহনে যে খরচ তা পোষাচ্ছে না। ফলে টমেটো তুলছেন না বহু কৃষক। কিন্তু হিমাগার না থাকায় টমেটো সংরক্ষণেরও কোন উপায় নেই। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে টনে টনে টমেটো। যা হতাশ করেছে কৃষকদের।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, সবজিভান্ডার খ্যাত সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর থেকে সলিমপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রতিবছর ব্যাপক হারে টমেটোর উৎপাদন হয়। ব্যতিক্রম হয়নি এবছরও। কিন্তু এবার চাহিদার চেয়েও বেশি টমেটো উৎপাদন হওয়ায় কমে গেছে টমেটোর দাম। পাইকারি দরে মাত্র ৭-৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি টমেটো। ক্ষেত থেকে শ্রমিক মজুরি দিয়ে টমেটো তোলার পর পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিতে যে খরচ পড়ে তাতে এই মূল্যে বিক্রি করলে উল্টো লোকসান হয়। অন্যদিকে টমেটো তুলে যে সংরক্ষণ করে রাখবে হিমাগার সংকটে তাও সম্ভব নয়। এ কারণে অসংখ্য কৃষক ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না।
সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম প্রধান সবজি উৎপাদক অঞ্চল মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে টমেটোর চাষ হয়েছে। কৃষকরা জমি থেকে উৎপাদিত টমেটো তুলে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখছেন। গ্রামের পথে, পুকুর পাড়ে, জমির পাশে অসংখ্য টমেটোর স্তূপ ও ঝুড়িতে সাজানো টমেটো দেখা গেছে। তবে টমেটো তুললেও কৃষকদের গলায় ছিলো চরম হতাশার সুর। পরিদর্শনকালে কথা হয়, গুলিয়াখালী গ্রামের প্রবীণ কৃষক আইয়ুব আলী, নাছির আহমেদ, মুজিবুল হকসহ বিভিন্ন কৃষকের সাথে।
কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, শুধু গুলিয়াখালীতে ৩ শতাধিক কৃষক টমেটোর চাষ করেছেন। আমিও চাষ করেছি প্রায় ১৬০ শতক জমিতে। মৌসুমের প্রথম দিকে ভালো দাম পেলেও বেশ কিছুদিন ধরে হঠাৎ দাম একেবারে কমে গেছে। আমি কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করেছি মাত্র ৬ টাকা করে। এখন এই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭-৮ টাকায়।
তিনি বলেন, টমেটো তুলতে একজন শ্রমিককে দিনে ৭শ টাকা মজুরি দিতে হয়। সাথে আছে খাওয়া খরচ। বাজারে নিয়ে যেতে আছে পরিবহন খরচও। ফলে অনেক কৃষক এখন জমি থেকে টমেটো তোলা বন্ধ করে দিয়েছে। পচে ঝরে পড়ছে টমেটো।
প্রবীণ কৃষক নাছির আহমেদ বলেন, ৮০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছি। বর্তমানে এক কেজি ভালো চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকার উপরে। ৭ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করলে ৯ কেজি বিক্রি করে এক কেজি চাল পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে শুধু গুলিয়াখালী গ্রাম নয়, একই অবস্থা পৌরসভার নুনাছড়া, বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাঁশবাড়িয়া কুমিরাসহ সলিমপুর পর্যন্ত সর্বত্র।
তবে পাইকাররা এই মূল্যে টমেটো কিনে নিয়ে গেলেও তারা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এই টমেটো নিয়ে বিক্রি করছেন কয়েকগুণ বেশি দামে। টেরিয়াইলের কৃষক মো. জানে আলম, নুনাছড়ার জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খরচ উঠছে না বলে আমরা টমেটো ক্ষেত থেকে তুলছি না। নষ্ট হচ্ছে টনে টনে টমেটো। যদি টমেটোগুলো কোন হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেত তাহলে আমরা দাম বৃদ্ধির সময় কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রির সুযোগ পেয়ে লাভবান হতাম। বহুকাল একটি হিমাগারের দাবি জানালেও তা না হওয়ায় প্রতিবছর আমাদেরকে বিপুল পরিমান টমেটো ফেলে দিয়ে আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হতে হয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এ বছর সীতাকুণ্ডে ৫৯০ হেক্টর জমিতে ৪৫০০ জন কৃষক টমেটো চাষ করেছেন। এখান থেকে ১৫ হাজার মেট্টিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এখন প্রচুর টমেটো উঠছে। ফলে দাম একেবারেই কমে গেছে। অতিরিক্ত টমেটো সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই হিমাগারের অভাবে। ফলে অনেকে খরচ পোষাতে না পেরে টমেটো তুলছেন না। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
পূর্বকোণ/এসএ