চট্টগ্রাম রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতেও পর্যটকশূন্য বান্দরবান

বান্দরবান সংবাদদাতা

১৩ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

ঈদ এবং উৎসবের ছুটির সময়ে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। কিন্তু এবারের ঈদের লম্বা ছুটিতে এই দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। পর্যটকশূন্য বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সন্ত্রাসী তৎপরতা সেই সাথে যৌথ বাহিনীর অভিযান আতঙ্কে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে বান্দরবান। পাহাড়ের দুর্গম এলাকা ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে।

 

দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশমান অন্যতম জেলা এখন পার্বত্য বান্দরবান। সারি সারি সবুজ পাহাড়, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ, পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল নদী আর ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি সবমিলিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের জেলা বান্দরবান। খুব অল্প সময়েই সারা দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে এই জেলাটি। দেশের দূর-দূরান্ত থেকেই শুধু নয়, বিদেশ থেকেও মানুষ প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে কয়েক লাখ পর্যটক বেড়াতে আসে বান্দরবানে।

 

জেলার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের পর্যটন স্থান নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, বগা লেক, দেবতা খুম, নাফাখুম, তিন্দু, রেমাক্রি বড় পাথর, কেউক্রাডং তাজিনডং, ডিম পাহাড়, আলি সুরঙ্গ, মেরিঞ্জা এসব মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলো ঘুরে দেখেন পর্যটকরা। জেলার জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশই আসে এই পর্যটন খাত থেকে। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতায় জেলার পর্যটন শিল্প বর্তমানে লোকসানের মুখে পড়েছে। গত দু-তিন বছর ধরে এই শিল্পে লাভের মুখ দেখছে না পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকরা পার্বত্য এই জায়গায় আসতে এখন ভয় পাচ্ছে। কিছু পর্যটক জেলা শহরে আসলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে তারা অনিহা প্রকাশ করছেন। জেলার পর্যটন কেন্দ্র ও হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলো এখন প্রায় খালি পড়ে আছে। বিভিন্ন রকম ডিসকাউন্ট দিয়েও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

 

সম্প্রতি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ রুমা ও থানচি উপজেলার কয়েকটি ব্যাংকে আক্রমণ, অস্ত্র গোলাবারুদ ও টাকা লুটপাটের পর পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। রুমা রোয়াংছড়ি থানচি এখন পর্যটক শূন্য। যা কিছু পর্যটক আসছে তারা শুধু জেলা শহর ও আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সর্বোচ্চ নীলগিরি পর্যন্ত গিয়ে তারা ফেরত আসছেন। গত বছর কেএনএফের সন্ত্রাসী হামলার কারণে পর্যটকদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। পরে ওই সংগঠনের সাথে শান্তি সংলাপের পর কিছুটা পর্যটক বাড়ে বান্দরবানে। কিন্তু গত কয়েক দিনের লাগাতার হামলার পর পর্যটকদের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসে। আগামী ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক আসবে কিনা তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

জেলার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা শহর ও উপজেলাগুলোর হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলো এখন খালি। ঈদের আগে আগাম বুকিং হয়ে যেত হোটেল মোটেলগুলো। কিন্তু সে পরিমাণ সাড়া নেই। সন্ত্রাসীদের তৎপরতা না কমলে পর্যটন শিল্পে মারাত্মক ধ্বস নামবে বলে তিনি জানান।

 

হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, লোকসানের কারণে অনেক হোটেল মোটেলের কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়েছে। অনেকেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

 

এদিকে এবারের ঈদের দীর্ঘ ছুটি রয়েছে। মূলত এসব ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় জমে বান্দরবানে। এবার পর্যটক কি পরিমাণ বেড়াতে আসবে তা নিয়ে এখনই শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা।

 

তবে পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানিয়েছেন, যেসব পর্যটক বেড়াতে আসবে তাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট