চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমণ্ডি ডাস্টবিন থেকে সোমবার রাতে যে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই নাসরিন প্রকাশ সুখীকে খুন করার পর প্রায় ১৫ ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়েছিল টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড়ে। পরে সন্ধ্যায় সুযোগ বুঝে লাশটি ফলমণ্ডির ডাস্টবিনে ফেলে আসা হয়েছিল।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে মীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য জানায়। ৩৪ বছর বয়সী মীর হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার মীর হোসেন রাস্তা ও ডাস্টবিনে ভাঙ্গারি ও কাগজ কুড়ানোর কাজ করতো। আর শিশুটির মাও একই কাজ করে। রাস্তায় বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে দেখা হওয়ার কারণে তারা পরস্পরের পরিচিত মুখ।
মোস্তাফিজুর বলেন, রবিবার রাতে শিশুটিকে রেখে তার মা বোতল-কাগজ কুড়াতে গেলে মীর হোসেন ফুসলিয়ে শিশুটিকে আন্দরকিল্লা থেকে টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণের পর খুন করে লাশ বস্তা ভরে রেখে পালিয়ে যায়।
উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় মীর হোসেন ভ্যান গাড়ি করে শিশুটির লাশ ফলমণ্ডির ডাস্টবিনে ফেলে চলে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করে মঙ্গলবার সকালে বাকলিয়া বৌবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার রাতে নগরীর বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকার ডাস্টবিন থেকে নাসরিন প্রকাশ সুখীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, শিশুটির বিশেষ অঙ্গে রক্তক্ষরণের চিহ্ন আছে। তাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা ছিল।
এ ঘটনায় শিশুটির মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, রবিবার রাত ৯টার দিকে কাগজ ও বোতল সংগ্রহ করতে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসেন বিলকিস। মা-মেয়ে জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থান করার সময় শিশুটি আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের উত্তর গেইটে লোকজনের কাছ থেকে টাকা চাইতে যায়।
বাদীর ভাষ্য, রাত ১টার দিকে তিনি তার মেয়েকে জামে মসজিদের সিঁড়িতে বসা অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় মেয়ে তার মাকে জেনারেল হাসপাতালের সামনে যেতে বলেন এবং সে আসছে বলে জানায়। মেয়ের আসতে দেরি হওয়ায় পুনরায় তাকে খুঁজতে গেলে বিলকিস তার মেয়েকে আর সেখানে দেখতে পাননি বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
গ্রেপ্তার মীর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্ত্তী বলেন, রাত ১টার পর মীর হোসেন শিশুটিকে চিপস ও চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে রিকশা করে কদমতলী আটমাসিং মোড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে হেঁটে টাইগার পাসের দিকে গিয়ে রাস্তার পাশে পাহাড়ে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। শিশুটি বাধা দেয়ার চেষ্টা করায় তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে একটি বস্তা কুড়িয়ে এনে সেখানে লাশটি রেখে চলে যায়।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ