কয়েকটি ধাপে চলমান কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও একমাস। গত সপ্তাহ থেকে চলছে সেতুতে সড়ক তৈরির কাজ। এই কাজ শেষ হলেই গাড়ি চলাচলে জন্য উপযোগী হবে সেতুটি। সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ এই সেতু আগামী মে মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ১ আগস্ট শুরু হয় সেতুটির সংস্কার কাজ। এরমধ্যে সেতুর অবকাঠামোগত সংস্কারের পর তৈরি করা হয় রেলপথ। এরপর শুরু হয় পথচারীদের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরির কাজ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। ফলে এই রেলপথে ট্রেন চলাচলের জন্য জরাজীর্ণ কালুরঘাট রেলওয়ে সেতুটির সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শে শুরু হওয়া এ সংস্কার কাজের তিনমাসের মাথায় স্টিল অবকাঠামোর সেতুটিকে উচ্চ ক্ষমতার ভারী লোকোমেটিভ চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। এতে সেতু পারাপারে বেড়েছে ট্রেনের গতি। এরপর গত ১১ নভেম্বর সম্প্রসারিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ১ ডিসেম্বর থেকে কালুরঘাট সেতু দিয়ে দুই জোড়া ঢাকা-কক্সবাজার আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করছে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, এই একমুখী সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও গত ৮ মাস ধরে কয়েকটি ধাপে চলমান রয়েছে সংস্কার কাজ। এরমধ্যে পথচারী পারাপারের জন্য সেতুর ডানপাশে যুক্ত করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। এটির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত পূর্বকোণকে বলেন, বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শে কয়েকটি ধাপে সেতুর সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। সেতুটিকে অবকাঠামোগত শক্তিশালী করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। সেতুটিকে যান চলাচলের উপযোগী করতে পাটাতনের উপর বিশেষ প্রযুক্তিতে কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এরপর পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসিয়ে কার্পেটিং করা হবে। এই কাজ শেষ হতে আরও প্রায় একমাস সময় লাগবে। যতো দ্রুত সম্ভব সেতু উন্মুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বুয়েট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক নিযুক্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্টিল অবকাঠামোর কালুরঘাট সেতুটি প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করছেন। সেতুটির সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
এ সংস্কার কাজের কারণে গত বছরের ১ আগস্ট সেতু বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় যানবাহন পারাপারে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। ফেরি চালুর প্রথম দিন থেকে পারাপারের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বোয়ালখালীর পূর্ব চরণদ্বীপ ঘাটিয়াল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি সাবের আহমদ রিজভী বলেন, কালুরঘাট সেতু দিয়ে নগরে যাতায়াত করি প্রতিদিন। সেতুটি একমুখী হওয়ায় যানজট দুইপাশে লেগেই থাকে। এছাড়া ট্রেনও চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। ফলে ৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। সংস্কারের পর আবার একই দশায় উপনীত হতে হবে। নতুন সেতু নির্মাণ দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া মুক্তি মিলবে না।
আরেক বাসিন্দা নুরুল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পুরনো এই সেতু আগেও কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছিল। নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ভোগান্তি কমবে না। কোনো উন্নয়নও হবে না এই এলাকার।
বোয়ালখালী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মাহমুদ বলেন, গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রধানমন্ত্রীও এই দাবির কথা জানেন। তবুও কোনো এক অদৃশ্য কারণে থমকে আছে।
পূর্বকোণ/পিআর