চট্টগ্রাম শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কূল পেলো না সুরক্ষা প্রকল্প

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৩ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

করোনার ধাক্কায় আটকে থাকা আনোয়ারা-বাঁশখালী উপকূলীয় সুরক্ষা প্রকল্প (বেড়িবাঁধ) তিন বছরেও কূল-কিনারা হল না। পানি উন্নয়ন বোর্ডে দীর্ঘদিন ঝুঁলে থাকা প্রকল্প জেগে ওঠলেও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফের ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড আনোয়ারা-বাঁশখালী উপজেলা উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষার জন্য বড় প্রকল্প নেয়। ২০২১ সালে ১৭শ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে। কিন্তু করোনা মহামারীতে বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ছাপা পড়ে থাকে প্রকল্পটি। করোনা ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর জেগে ওঠে প্রকল্পটি। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছছে শম্বুকগতিতে। খেই হারানো প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছলেও বাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফেরত পাঠানো হয়।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আনোয়ারা উপজেলার সমুদ্র অংশ পুরোটাই সুরক্ষিত হয়ে যাবে। এরফলে কয়েক হাজার লোকের বাড়িঘর, সহায়-সম্বল রক্ষা পাবে।’ তিনি বলেন, সমুদ্র তীর ছাড়াও সাঙ্গু নদীর তীর ভাঙন থেকে বিশাল এলাকা রক্ষা পাবে।’

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আনোয়ারা-বাঁশখালী উপজেলার টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নেয়া হয়। ২০২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমোদন হয়ে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পৌঁছে। সবর্শেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উত্থাপিত হয়। আরও যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প মূল্যায়ন করার জন্য পিইসি থেকে ফেরত পাঠানো হয়।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র তীর সুরক্ষা এবং সাঙ্গু নদীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপি ইতিমধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেন-দরবার শুরু করেছেন। আনোয়ারার সন্তান ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর প্রকল্পটি অনুমোদন নিয়ে আশাবাদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

 

প্রকল্পে যা রয়েছে : প্রকল্পের ডিপিপিতে দেখা যায়, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সময় ধরা হয় ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের জুন মাসে। নদী ও সাগর তীর রক্ষায় নতুন বাঁধ নির্মাণ, পুরোনো বাঁধ পুনর্নির্মাণ-সংস্কার করে সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেয়া।

 

বাঁশখালী অংশ : প্রকল্পের বাঁশখালী অংশে ৫৮৮ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়। এতে রয়েছে বাহারছড়া ইউনিয়নে তিন প্যাকেজে এক হাজার মিটার বাঁধ। খানখানাবাদে চার প্যাকেজে ১৩১০ মিটার, ছনুয়া ইউনিয়নে আট প্যাকেজে ২৮শ মিটার, সাধনপুরে দুই প্যাকেজে ১১শ মিটার, মোহনায় পুরোনো বাঁধ শক্তিশালীকরণে ১৩ মিটার। বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও ছনুয়া ইউনিয়নের সাগরতীর এবং সাধনপুর ও মোহনায় সাঙ্গু নদীর তীর ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।

 

আনোয়ারা ইউনিয়নে ৩১৯ কোটি ২ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। রায়পুরে সমুদ্র তীর প্রতিরক্ষায় সাত প্যাকেজে ২৭৭৫ মিটার, রায়পুরে ১২শ সাঙ্গু নদীর তীর রক্ষা এবং জুঁইদ-ীতে ১২শ মিটার অংশ প্রতিরোধে প্রকল্প নেওয়া হয়।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, আনোয়ারার সমুদ্র তীর এলাকার ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। নতুন প্রকল্পে তিন কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পের সাগর তীর ছাড়াও সাঙ্গু নদীর ভাঙনরোধে ২৪শ মিটার এলাকা ধরা রয়েছে।

 

বাদ পড়ল সাঙ্গু নদীর ড্রেজিং : প্রকল্পের ডিপিপিতে সাঙ্গু নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় ১০১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পের কাটছাঁট ও ব্যয় কমানো নির্দেশনার পর ড্রেজিং অংশ বাদ দেওয়া হয়।

 

২০১৬ প্রকল্প নিয়ে নয়- ছয়ের অভিযোগ : আনোয়ার উপকূলীয় বাঁধ সুরক্ষায় ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শুরু থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ ওঠেছে। ২০২০ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়ও বেড়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত করা হয়। সরকারি দলের নেতাদের চাপে অতিষ্ঠ ছিল ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্প পরবর্তীতে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল এলাকাবাসী। এ অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে তারা। রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়া পাড়া, গলাকাটার ঘাট, বাইগ্গ্যার ঘাট, বার আউলিয়া, ফকির হাট ও সরেঙ্গা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ দেবে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর-১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, ‘৫২ প্যাকেজের মধ্যে ৪৩ প্যাকেজের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৯ প্যাকেজের কাজ ইতিমধ্যেই শেষের দিকে। মোট প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট