চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ বিশ্ব পানি দিবস

অপরিকল্পিত পানি উত্তোলনে সংকটে কর্ণফুলী-হালদা

মোহাম্মদ আলী  

২২ মার্চ, ২০২৪ | ১:১৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের মিঠা পানির আধার হালদা ও কর্ণফুলী। এ দুটি নদীর পানি নির্ভরে কাজ করছে কৃষি, মৎস্য, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে গভীর সংকটে পড়েছে এ দুটি নদী। চলমান এ সংকট নিরসনে এখনই সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে না পারলে ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। 
৯৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নে। এটি রামগড়, মানিকছড়ি, ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী ও চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বিশাল এ নদীর পুরোটাই মিঠা পানির আধার। এ নদীর পানির উৎস দুই পাশের ৩৬টি খাল ও ছড়া। কিন্তু ভুজপুর রাবার ড্যাম, ফটিকছড়ি উপজেরার হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরুং কংক্রিট ড্যাম, হাটহাজারীর হালদা প্যারালাল খাল, ওয়াসার মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, মোহরা পানি শোধনাগার, ১৮টি স্লুইস গেট এবং অন্যান্য মাধ্যমে কৃষি কাজের জন্য নদী থেকে শুষ্ক মৌসুমে দৈনিক প্রায় এগার শত কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। এ অবস্থায় নদীর মিঠা পানির জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে বঙ্গোপসাগরের লবণ পানি। তাতে ওয়াসার দুটি পানি সরবরাহ প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পানি মিলছে। চট্টগ্রামের আরেক মিঠা পানির নদী কর্ণফুলী।
ভারতের মিজোরাম থেকে সৃষ্ট কর্ণফুলী নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশের অংশের ১৬১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে। এ নদী পার্বত্য রাঙামাটি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী, পশ্চিম পটিয়া, আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম শহর হয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। বিশাল এ নদীর দুই ধারে রয়েছে ইছামতি রাবার ড্যাম, ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২ এবং বিভিন্ন স্লুইস গেট। এগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন কর্ণফুলী থেকে বিপুল পরিমাণের পানি উত্তোলন করা হয়। বিশেষ করে ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২ এর মাধ্যমে দৈনিক উত্তোলন করা হয় ২৮ কোটি লিটার। নদীর ওপারে সরকারি সেবা সংস্থাটির ‘ভাণ্ডালজুরি পানি সরবরাহ প্রকল্প’ নামে আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। আগামী জুনে এটি উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চালু হলে এ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী থেকে দৈনিক পানি উৎপাদন হবে আরো ৬ কোটি লিটার। তাছাড়া কৃষি কাজের জন্য বিশাল এ নদী থেকে সারাবছর প্রচুর পরিমাণের পানি উত্তোলন করা হয়।
কিন্তু যে পরিমাণ পানি নদী থেকে উত্তোলন করা হয়, সে পরিমাণ পানি যোগানোর ব্যবস্থা না থাকায় বঙ্গোপসাগরের লবণ পানি ডুকে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। একই সময়ে কাপ্তাই লেকের ৫টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট চালু থাকায় হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে লবণ পানি প্রবেশ করে অত্যন্ত সহজে। এ কারণে চট্টগ্রামের মিঠা পানির প্রধান দুটি নদী এখন সংকটের মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি নদী দুটির বিভিন্ন এলাকায় চর জেগে উঠছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে নদীর মিঠা পানি।
আজ বিশ্ব পানি দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শান্তির জন্য পানি’। পানি দিবসের ধারণাটি প্রথম ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেরিওতে পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের সম্মেলনে প্রস্তাবিত হয়। পরবর্তীতে একই সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে মনোনীত করে একটি প্রস্তাব পাস করে। এরপর প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় ১৯৯৩ সালে।
এদিকে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি ব্যবহার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হয় হালদা ও কর্ণফুলী নদী থেকে। কোন কারণে এ দুটি নদী দূষণ, ভরাট কিংবা অন্য কোন সংকটে পড়লে পানি সমস্যায় পড়বে পুরো নগরবাসী। লবণ পানি ছাড়া মোহরা পানি শোধনাগারে হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে পানি তোলা হয় সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। এতে ভাটার সময়ে নদী থেকে পানি উত্তোলনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেকটা এলার্মিং। এখনি সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে আমাদের বড় মাসুল গুণতে হবে।’
নদী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘হালদা ও কর্ণফুলী নদীর সংকট নিরসনে মৎস্য, কৃষি, এলজিইডি, পরিবেশ, পানি উন্নয়ন, বিদ্যুৎসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে এক সময় পানির জন্য হাহাকার করতে হবে।’
পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট