চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাত থেকে গ্রেনেড পড়ে যাওয়ায় আমাদের তিন সহযোদ্ধা মারা যান

সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, রাঙামাটি অফিস

১৮ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মনে বিশ্বাস জন্মালো দেশ স্বাধীন হবে। ১৯৭১ সালে এইচএসসি পাশ করার পর চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে ভর্তি হওয়ার একবছর পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমার ভাই সুবাস রতন বড়ুয়াসহ আমি মুক্তিযুদ্ধে যাই। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করে একথাগুলো বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুকুল রতন বড়ুয়া।

 

তিনি জানান, বাবা শচিন্দ্র লাল বড়ুয়া ছিলেন পুলিশের দারোগা, বদলিজনিত কারণে কুমিল্লা থাকাকালে ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লাতে আমার জন্ম হয়। বাবা সিলেট থাকাকালে স্থানীয় দুর্গাপুর পাঠশালা, নোয়াখালী থাকাকালে এখানে এসএসসি পাশ করি এবং রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরে যুদ্ধ শেষে পুনরায় ভর্তি হয়ে চট্টগ্রাম থেকে মেকানিকেল ডিপ্লোমা পাশ করি।

 

মে মাসের শুরুতে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা সদরের আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়ুদুর রহমান, তাঁর ছেলে আবদুল জলিল, আবদুস সামাদ খাগড়াছড়ি দিয়ে ভারতের অমরপুর গ্রামের পালাটুনা ক্যাম্পে ভর্তি হই। ক্যাপ্টেন সুজত আলীর পরিচালনায় এটি ছিল একটি ই্য়ুথ ক্যাম্প। পরে অম্পিনগরে গেরিলা ট্রেনিং নিই ২১ দিন। মি. বেগ নামের একজন ভারতীয় আর্মি অফিসার আমাদের ট্রেনিং দেন। এই ক্যাম্পে একজন বাংলাদেশি ও একজন নেপালি ট্রেইনারও ছিল। অম্পিনগরে গেরিলা ট্রেনিং এর সময় গর্তের মধ্যে থ্রো করার সময় অসাবধানতাবশত হাত থেকে গ্রেনেড পড়ে গেলে আমাদের তিন জন সহযোদ্ধা মারা যান। এ ক্যাম্পে ট্রেনিং গ্রহণকারী আমাদের সবার হাতে এসএমজি, ২টি করে গ্রেনেড প্রদান করা হয়। পরে আমাদেরকে ৬ জনের গ্রুপ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ভারতের হরিণা ক্যাম্পে রাতে ২ ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে একজন গাইড যোগে রামগড় দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে আমাদের সাথে দেখা হয় রাঙামাটি অনিল, নাজমুল হক, নিরঞ্জন দাশ ও ফনিভূষন দাশের সাথে। আমরা রাবার বাগান হয়ে রাঙ্গুনিয়া পৌঁছি। এখানে রাঙ্গুনিয়ায় একজন কবিয়ালের বাড়িতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। রাঙ্গুনিয়ার ৪১ নং গ্রুপের ৭ জন ও পোমরার মিলন দাশ গ্রুপ। এ সময় আমাদের করণীয় ঠিক করে দেওয়া হয় এবং বলা হয় আশেপাশের লোকালয়ে অপারেশন না করার জন্য। মুক্তিযোদ্ধা আরও সংগ্রহ ও সংগঠিত করার কথা বলা হয়। পরে রাঙ্গুনিয়া থেকে রাউজান যাওয়ার সময় স্থানীয় রাজাকারদের সাথে আমাদের সংঘর্ষ হয়। আমাদের কাজ ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। এ সময় রাঙ্গুনিয়ায় বিলের ওপর থাকা ৩৩ কেভি লাইনের বিদ্যুৎ এর কয়েকটি পিলার আমরা ভেঙ্গে দিই। পরে দেশ স্বাধীন হলে আমরা রাঙ্গুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আলমের নিকট অস্ত্র জমা দিই।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন