সারা দেশের ন্যায় সন্দ্বীপের মাটিতেও পাক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডামাডোল বাজতে থাকে। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরপরই সন্দ্বীপের মাটিতে সংগ্রাম পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সন্দ্বীপ টাউনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মূলত মার্চ থেকে পাকিস্তানিদের প্রতিরোধে সন্দ্বীপের মাটিতে মুক্তিকামীদের কার্যক্রম শুরু হয়।
অগ্নিঝরা মার্চের দিনগুলো বর্ণনা দিতে গিয়ে সন্দ্বীপের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের ডাক্তার আজিজ উল্ল্যা বলেন, ৭ মার্চের পর রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে সন্দ্বীপ টাউনে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করা হয়। সেখানে সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জমায়েত হয়। পরে উপজেলা মাঠে নেতারা বক্তব্য দেন। এরপর সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে মোছাদ্দের আহামদকে সভাপতি এবং জাহিদুর রহমান মোক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, অনাথ বন্ধু দত্ত, আবদুর রব খদ্দর, এন এম সেলিম প্রকাশ বাবা সেলিম, মাস্টার শাহজাহান বিএ, জামশেদ ডাক্তার, শাহ বাঙ্গালি, নসু বাবু।
মার্চের শুরুতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জোরালো ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে সন্দ্বীপ উপজেলায় ছাত্র সমাবেশে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম সন্দ্বীপ টাউনের কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় মশিউর রহমান জগলু, আলী হায়দার চৌধুরী বাবলু, মাহবুবুল আলমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলাম।
ডাক্তার আজিজ উল্ল্যা আরো বলেন, মূলত মার্চ থেকে সন্দ্বীপে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনবল জোগার করার কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তাানি মিলিটারির হামলা ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আমাদের কাজের গতি আরো বেড়ে যায়। আমরা অনুমান করতে পেরেছি দেশে ভয়াবহ কিছু হবে। আমরাও প্রস্তুত হতে থাকি। এলাকায় এলাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ শুরু করি। তখন বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানিদের দোসররাও সংগঠিত হতে থাকে। তারা নানানভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করে। আমরা সেগুলো কঠোরভাবে দমন করে আমাদের কাজ অব্যাহত রাখি। এপ্রিল মাস থেকে সন্দ্বীপ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে প্রশিক্ষণের জন্য ভারত পাঠানো শুরু করি। মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরুতে সন্দ্বীপ আসেনি। পাক আর্মি ১০ মে সন্দ্বীপ আসে। এসেই তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুর রহমান মোক্তারসহ চন্দ্র কুমার ও দুইজন পালকিবাহককে গুলি করে হত্যা করে। দু’দিন পর তারা সন্দ্বীপ থেকে চলে যায়। এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ শুরু করি। আমাদের সদস্য বাড়াতে সন্দ্বীপের মাটিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবশেষে থানা আক্রমণের মাধ্যমে ৭ ডিসেম্বর সন্দ্বীপ শত্রুমুক্ত হয়। সবকিছু মিলিয়ে মার্চ ছিল উত্তেজনার মধ্যে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে গুছিয়ে উঠার সময়।
পূর্বকোণ/পিআর