চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

এপ্রিলে হানাদারবাহিনী নিরীহ লোকজনকে হত্যা ও বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, লোহাগাড়া

৫ মার্চ, ২০২৪ | ৬:৩১ অপরাহ্ণ

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকতার আহমদ সিকদার বলেছেন, সেই ভয়াল ১৯৭১। এপ্রিল মাসে বর্তমান উপজেলা সদর বটতলী মোটর স্টেশনে বিমান হামলার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে এবং বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।

পরে লুটপাটের তাণ্ডব চালিয়ে মহিলাদের নির্যাতন করে। লোহাগাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আলহাজ আখতার আহমদ সিকদার একাত্তরের এক হৃদয়বিদারক ঘটনা তুলে ধরেন। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা যখন মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন ঠিক ওই সময় উত্তর-পূর্বদিক থেকে পাকবাহিনীর দু’টি জঙ্গি বিমান এসে লোহাগাড়া বটতলী মোটর স্টেশনের উপর গুলি বর্র্ষণ ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে লোহাগাড়া ইউনিয়নের বাচা মুন্সির পাড়ার মরহুম আলতাফ মিয়ার পুত্র ছালাম গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ঘটনাস্থলে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় ১৫/২০ টি দোকান।

ওই সময় প্রাণের ভয়ে পালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন লোকও আহত হন। সেই দিন বিকেল বেলা এলাকার কয়েক স্থানে স্বাধীনতাকামী বীরজনতা ও বিরোধিতাকারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বিমান হামলার দিন লোহাগাড়া দরবেশহাট দিঘির পূর্ব পাড়ে বোর্ড প্রাইমারি স্কুলে পালিয়ে আসা ইপিআর এর কয়েকজন সৈনিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। একদিন পর ওই সৈনিকেরা লোহাগাড়া ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। বিমান হামলার পর পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

৩০ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী পায়ে হেঁটে বটতলী মোটর স্টেশন হতে আমিরাবাদ মঙ্গলনগর এলাকার দিকে রওনা হয়। তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে সহায়তা করেছিল মাস্টার হাট এলাকার তথাকথিত শান্তি কমিটির সদস্য ও পাকহানাদার বাহিনীর দোসর কথিত বাদশাহ্ মেম্বার। তার সহায়তায় পাকহানাদার বাহিনী মঙ্গলনগর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাড়ায় গিয়ে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। এতে নিহতরা হলেন যথাক্রমে টুন্টু ধর, শংকর ধর, কিরণ ধর, হরিশ্চন্দ্র ধর, অন্নদা ধর, ধীরেন্দ্র ধর, ধীরেন্দ্র লাল ধর, শুদ্ধাসেন ধর, ননী গোপাল (অতিথি), সাহেব ধর, যতীন্দ্র লাল দাশ, শশাঙ্ক ধর, মহেন্দ্র লাল, কান্তি ধর। একই সাথে প্রায় দু’শত ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং শতাধিক মহিলার উপর নির্যাতন চালায়। অগ্নিদগ্ধ বাড়ি-ঘরের মালামাল লুট করে কতিপয় দুস্কৃতিকারী।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকতার আহমদ বলেন, ওই সময় অপর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সূচনা হয় উত্তর আমিরাবাদ পাল পাড়ায়। পাকহানাদার বাহিনীর গুলি করে হত্যা করে কবিরাজ নিরঞ্জন চৌধুরী, মন্টু দে, অনিল বন্ধু দাশ, দারকানাথ চক্রবর্তীকে। এলাকার ব্রাহ্মণপাড়া, বণিক পাড়া, জলদাশ পাড়ার প্রায় ৭০/৮০ টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়, একই সময় বাড়ির মালামাল লুটপাট ও মহিলা নির্যাতন চলে। পার্শ্ববর্তী মুদি পাড়া ও বৈরাগী পাড়ার বাড়ি ঘরে ও লুটপাট চালায়। পাল পাড়ায় রাজাকার, আল বদর ও তাদের দোসরেরা ৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং পুরো পাড়ার বাড়িঘরে লুটপাট চালায়।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট