চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন

ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে নাজিরহাট কলেজে শুরু সশস্ত্র প্রশিক্ষণ

বিশ্বজিৎ রাহা, ফটিকছড়ি

৩ মার্চ, ২০২৪ | ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন বলেছেন, পাকিস্তানিদের বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানার কারণে আমরা বুঝে যাই ওদের সাথে আমাদের যুদ্ধ অত্যাসন্ন। 

 

তিনি বলেন, তখন তিনি নাজিরহাট কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে সময় ফটিকছড়ির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল নাজিরহাট কেন্দ্রিক। তখন নাজিরহাট কলেজের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন পরবর্তী বিএলএফ কমান্ডার আনোয়ারুল আজিম। তিনি ঊর্ধ্বতন নেতাদের গোপন নির্দেশে নাজিরহাট কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। 

 

ইসমাইল হোসেন বলেন, ছাত্রনেতা আনোয়ারুল আজিম, রোসাংগিরির এস এম ফারুক, রোসাংগিরির আরেক আনসার কমান্ডার (নাম মনে নেই) মিলে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে তারা কয়েকটি গাদা বন্দুক যোগাড় করেন। অতপর সে সব গাদা বন্দুক আর লাঠি  নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রথমে আমিসহ ২০/৩০ জন ছাত্র প্রশিক্ষণে অংশ নিলেও দিনে দিনে প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন দেশের পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থা। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে চারিদিকে একটা চাপা উত্তেজনা এবং পাকিস্থানি আর্মিদের একটা ভয় জনমনে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্ত তখনো সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতে থাকে এবং প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে। মার্চের শেষের দিকে ইপিআরের মেজর রফিক ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের লে. শওকতের নেতৃত্বে প্রায় শদুয়েক জোয়ান সে সময় চট্টগ্রাম শহরের দিক থেকে এসে নাজিরহাট কলেজ ও নাজিরহাট আহমদীয়া মাদ্রাসায় অবস্থান নেয়। 

 

তিনি বলেন, তখন আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা আলম, আনোয়ারুল আজিম, এস এম ফারুকের নেতৃত্বে তারা এসব ইপিয়ার ও সেনা জোয়ানদের রসদপত্রসহ নানা সহযোগিতার করে যান। কিন্ত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের দিকে পাকিস্থানি আর্মিরা নাজিরহাটে আসার খবরে মেজর রফিক ও লে. শওকতের নেতৃত্বে থাকা জোয়ানরা পশ্চাদপসরণ করে ভারতের উদ্দেশ্যে রামগড়ের দিকে চলে যান। অতপর পুরো নাজিরহাট-ফটিকছড়ি পাকিস্থানি আর্মিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পাকিস্থানি আর্মিরা নাজিরহাট কলেজ এবং বাজারে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। তারা যাকে যেখানে পেয়েছে সন্দেহ হওয়া মাত্র মারধর নির্যাতন শুরু করে। তারা পথচলতি মানুষ, গাড়িতে করে যাওয়া মানুষদেরও নামিয়ে এনে তাদের মত করে তল্লাশি শুরু করে, এবং সন্দেহ হলে মারধর ও তাদের ক্যাম্পে নিয়ে নির্য়াতন চালাতো। এতে সমগ্র এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পুরো ফটিকছড়ি এবং নাজিরহাট তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এদিকে দলে দলে যুবক গোপনে বিভিন্ন চোরাই পথে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেবার জন্য ভারতের উদ্দেশ্যে চলে যেতে থাকে। সেই সাথে হাজার হাজার শরণার্থী ফটিকছড়ির বিভিন্ন পথ দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে চলে যেতে থাকে।

 

মো. ইসমাইল আরো বলেন, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বা মে’র প্রথম সপ্তাহের দিকে তিনি, নারায়নহাটের রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী, ফরহাদাবাদের আবুল কালাম চৌধুরী, খোরশেদ, ফরিদ, আবু ছালেহ সহ (বাকিদের নাম মনে নেই) তারা মোট ১৭ জন ভারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারা প্রথমে রামগড় রোড ধরে উত্তর ফটিকছড়ির মির্জাহাট পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ঘুর পথে সুন্দর শাহের ছিলা, নারায়ণহাটের যুগ্যার ছোলা, মানিকছড়ি, গুইমারা হয়ে প্রায় ৭০/৮০ মাইল হেঁটে তিন দিনের মাথায় খাগড়াছড়ির গুইমারার ‘অভ্যই’ সীমান্ত দিয়ে ভারতের সাব্রুমে প্রবেশ করেন।       

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট