কৃষিতে দুই ভাইয়ের সাফল্য
বরইয়ের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। গাছের উচ্চতা ৫-৬ ফুট। ফলের ভারে ছুঁয়ে আছে মাটি। বরই ফলগুলো দেখতে ছোটখাটো আপেলেরই মতো। বর্ণিল রঙের এই বরই কোনটা কাঁচা আর কোনটা পাকা বোঝা ভারি মুশকিল। পাখির উৎপাত ঠেকাতে বিশাল এলাকাজুড়ে এই বরই বাগান জাল দিয়ে ঢেলে রাখা হয়েছে। শুধু কী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করে তাক লাগিয়েছেন দুই তরুণ। তাদের বাগানের বরই যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আবর-আমিরাত, ওমান, ইউএসএ ও কাতারে। কী নেই এই ইমন ও তুহিন-দুই সহোদরের সমন্বিত বাগানে। নানা ধরনের ফলমূল, সবজি থেকে শুরু করে গরু-ছাগলের বিশাল খামার গড়ে তুলেছেন দুই ভাই। অল্প সময়ে কৃষিতে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছেন তারা। বোয়ালখালীর সারোয়াতলী খিতাপচর গ্রামে খিলা জমিতে সমন্বিত ফলমূল ও কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন মিনারুল হক মিন্টুর দুই ছেলে তানভীরুল হক ইমন ও সাইদুল হক তুহিন। দুই তরুণই কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। প্রায় ২ একর জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে ৮ শতাধিক বরই গাছ। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় বরইফল।
মিনারুল হক মিন্টু জানান, বোয়ালখালী খালের তীরে পৈত্রিকভাবে ৮ একর জমি ছিল। কিন্তু খালের পানিতে লবণাক্ততা ও শিল্প দূষণের কারণে চাষাবাদ হতো না। আগাছা জন্মে ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়। বছরের পর বছর খিলা পড়ে থাকে এই জমি।
তিনি বললেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। দেশে ফিরে আসি। আয়- রোজগারের পথ না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। শেষশেষ পথ দেখালেন দুই ছেলে। পতিত জমিতে কৃষি খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখালেন তারা। ফলমূল, সবজি বাগান ও গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে শুরু হয় স্বপ্নযাত্রা। পরেরটা এখন ইতিহাস।
কলেজ পড়ুয়া ইমন জানান, ২০২০ সালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহর পরামর্শে পতিত জমির ১৬ শতকে ৮০টি বল সুন্দরী জাতের বরই চাষ করি। বল সুন্দরী জাতের বরই বিক্রি করে পরের বছর (২০২১ সাল) আয় হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। প্রথম বছরেই মুগ্ধ হন পিতা ও দুই সন্তান। এরপর বাগানের পরিধি ও বিস্তৃতি বাড়তে থাকে।
চার বছরে বাগানে বল সুন্দরী, কাশ্মিরী, ভারত সুন্দরীসহ নানা জাতের ৪ শতাধিক বরই গাছ লাগানো হয়। এই বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় দুই লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন তারা।
বাগানে উৎপাদিত বরই নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র ছাড়া অনলাইনেও বিক্রি করা হয়। এবার অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, ওমান, ইউএসএ এবং কাতারসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫ শ কেজি বরই বিক্রি করেছেন।
দুই সহোদর জানান, বিষমুক্ত ফল ও সবজি উৎপাদন করছেন তারা। রাসায়নিক সারও খুব একটা ব্যবহার করেন না বাগানে। নিজেদের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে এই ফসল উৎপাদন করছেন।
৮ একর জায়গাজুড়ে বরই বাগান ছাড়াও গড়েছেন আম, মাল্টা, লিচু, পেয়ারা, লেবু, কলা, নারিকেল ও সুপারি বাগান। রয়েছে মৌসুমী সবজি ক্ষেত ও গরু-ছাগলের খামার। প্রতিবছর কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজাকরণ করা হয় খামারে। বর্তমানে ৩৫টি গরু ও অর্ধ শতাধিক ছাগল রয়েছে। ২০টি দুধেল গাভি রয়েছে। ছাগল উৎপাদনে প্রথম বছর লোকসান গুনেছিলেন। তারপর ঘুরে দাঁড়ান তারা। এখন সারাবছর ছাগল পাওয়া যায় তাদের খামারে। ইমন ও তুহিন দুই ভাই মিলে পতিত জমিতে সুমিষ্ট ফলের আবাদ করে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ। তিনি বলেন, কর্মস্পৃহা ও উদ্যমী হওয়ার কারণে তাদের এই সফলতা এসেছে। দুই ভাই এখন কৃষিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পূর্বকোণ/পিআর