চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোয়ালখালীতে মাটি কাটার মহোৎসব

রাতে কাটা হচ্ছে পাহাড়-কৃষি জমি

বোয়ালখালী সংবাদদাতা 

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নির্বিচারে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড়, টিলা ও কৃষি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে। এইসব মাটি দিয়ে আবাসনের জন্য অন্যত্র ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি। ফলে এদিকে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। অপরদিকে ভরাটের কারণে কমছে চাষের জমি। জানা গেছে, প্রশাসনের অভিযান না থাকায় মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে।

 

কৃষকেরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা মাটি কাটার ব্যবসা জড়িত। নামমাত্র মুল্যে দিয়ে কৃষি জমির মাটি স্কেভেটর দিয়ে কাটা হয়। এসব মাটি ভরাট কাজের জন্য বিক্রি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কৃৃৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি জমির মাটি কাটতে গিয়ে আশপাশে শত শত একর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে এসব জমি আর চাষাবাদের উপযোগী থাকে না। তারা এলাকার ক্ষমতাসীন লোকজন হওয়ায় বাধা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জমির নিরীহ মালিকদের। ফলে ফসলি জমিকে পুকুর বানাচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীরা।

 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী চরখিজিপুর, পশ্চিম শাকপুরা, সারোয়াতলীর কঞ্জুরী ও বেঙ্গুরা, আহলা করলডেঙ্গার তালুকদার পাড়া, আমুচিয়া, জৈষ্ঠ্যপুরা, খরণদ্বীপ এবং পোপাদিয়া এলাকায় কৃষি জমির মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাতের বেলায় মাটি কাটা হয় এবং রাতেই ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় এসব মাটি।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, জমি নিজের বা অন্যের হোক মাটি কাটার সুযোগ নেই। যেহেতু এই বিষয়ে আইন আছে। জমির উপরিভাগের মাটিতে অর্গানিক যেসব উপাদান থাকে তা কেটে নিয়ে ফেললে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। ফলে জমিতে বেশি পরিমাণের সারের প্রয়োজন পড়ে চাষাবাদে ও সেইসব জৈব উপাদান পূরণ হতে অনেক বছর সময় লাগে।

 

গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কেটে কৃষি জমিকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। স্কেভেটরের থাবা পড়ছে পাহাড়ি টিলায়ও। স্থানীয়রা বলেন, ৫ থেকে ১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে আশপাশের জমিগুলো ভাঙনের মুখে পড়ছে। এর প্রতিবাদ করলে কৃষকদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।

 

তাঁরা বলেন, এ বছর ইতিমধ্যে গ্রামের শতাধিক একর জমির মাটি লুট করা হয়েছে। এসব জমির মাটি কাটতে কৃষকদের প্রতি একরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেককে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। আর প্রতি ট্রাক কৃষি জমির মাটি ১ হাজার টাকায় ভরাটের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। ৩টি ট্রাক দিয়ে প্রতি রাতে মাটি পরিবহন করা হয়। সারারাত ধরে চলে এ কার্যক্রম। এক রাতে কমপক্ষে শতাধিক ট্রাক মাটি পরিবহন করা হয়। এতে রাতারাতি আয় হয় লাখ টাকা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালুকদার পাড়া এলাকায় মাটি কেটে বিক্রয় করছেন ছাদেক নামের এক ব্যক্তি। তার সাথে রয়েছে আরও কয়েকজন। সিন্ডিকেট করেই এই মাটি ব্যবসা চলছে। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় নেতা-কর্মী, থানা পুলিশ, স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এই কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, মুখ না খোলার জন্য প্রতি রাতেই টাকা পৌঁছানো হয় এইসব বিশিষ্টজনদের কাছে। এ বিষয়ে জানতে মাটি ব্যবসায়ী ছাদেক আলীর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে বলেন, তিনি এর কিছুই জানেন না। এরপর মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সারোয়াতলী কঞ্জুরী গ্রামে মাটি কেটে বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির মাটি নয় পুকুরের মাটি কাটা হচ্ছে। কৃষি জমির মাটি কাটা হলে তিনি নিজেই এতে বাধা দেবেন বলে জানান। তবে স্থানীয়রা বলেন, পুকুরের মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি।

 

মাটি কাটার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, পাহাড়-টিলা ও কৃষি জমির মাটি কাটার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন