চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতেই সর্বোচ্চ ওজনের মুলা উৎপাদিত হচ্ছে। এসব মুলার ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি হয়ে থাকে। সাধারণত এতবড় মুলা দেশের আর কোথাও উৎপাদন হয় না। এই মুলার নাম জাপানি হাইব্রিড তাসাকিসান মুলা (ভা-ারী মুলা)।
জানা গেছে, হাইব্রিড জাতের এই মুলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদী, ধুরুং ও সর্তাখালের বিস্তীর্ণ চরে উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে নাজিরহাট পৌরসভা, সুয়াবিল, সুন্দরপুর, বৃহৎ কাঞ্চননগর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা, ধুরুংখাল এবং খিরাম দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্তাখালের চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কৃষি কাজ। এসব এলাকায় ভাণ্ডারী মুলার চাষ হয়ে থাকে।
ফটিকছড়ি উপজেলায় নদী ও খালের চরের ১৩’শ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব চরে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ভাণ্ডারী মুলার চাষাবাদ হয়। উপজেলার মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের আধ্যাত্মিক জগতের সাধক পূরুষ শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী প্রকাশ হযরত কেবলার ওরশ শরীফে তিনদিনব্যাপী লোকজ মেলায় বিক্রির জন্য চরাঞ্চরের মানুষ এই মুলার চাষ করেন। প্রতিবছর ২৩ জানুয়ারি (১০ মাঘ) হযরত কেবলার ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। ওরশে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়। আগত ভক্তদের কাছে বিশাল আকৃতির এসব মুলার বেশ কদর রয়েছে। ফলে এই মুলার নামকরণ করা হয়েছে ভাণ্ডারী মুলা। একমাত্র ১০ মাঘের ওরশকে সামনে রেখে এই মুলার চাষাবাদ করা হয়।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকে ভাণ্ডারী মুলা রোপণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। উৎপাদনে বিভিন্ন দেশীয় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে, এই মুলার চাষাবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। এক আগন্তক রোগের কারণে উৎপাদিত অনেক মূলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন অনেক চাষী। কৃষি সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন চাষীরা।
এদিকে, শুধু ফটিকছড়িতে ভাণ্ডারী মুলা কেনো এতো বৃহৎ আকৃতির হয় তা সরেজমিনে জানতে এবং রহস্য উন্মোচনে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি হাটহাজারীর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী ফটিকছড়ির সুয়াবিল ও সুন্দরপুর ইউনিয়নের হালদার চর পরিদর্শন করেছিলেন।
সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সামছুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে জানিয়েছেন, বৃহৎ আকৃতির মুলাচাষের রহস্য উদঘাটন ও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি তা জানতে আমরা ফটিকছড়ির হালদার চরে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে গবেষণা করে জানতে পারি- হালদা নদীর পলির মাটির উর্বরতা ও হাইব্রিড জাতের বৈশিষ্ট্যের কারণে এবং কৃষকদের কাঠোর পরিশ্রম, যথাসময়ে সার-কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারে এই মুলার আকৃতি বড় হচ্ছে। মাঘ মাসের ওরশকে কেন্দ্র করে আয়ের লক্ষস্থির করে চাষীরা ওই মুলার পেছনে সময় দিচ্ছেন বলেই উৎপাদন আশানুরূপ হচ্ছে।
নাজিরহাট পৌরসভার সুয়াবিলের নাইচ্চ্যরঘাটের হালদা চরের কৃষক মুহাম্মদ সোহেল জানান, আমি তিনকানি (১২০ শতাংশ) জমিতে ভাণ্ডারী মূলা চাষ করেছি। লক্ষ্য হচ্ছে সব খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ টাকা আয় করার। তবে, আমার ক্ষেতে অজানা এক রোগের কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে।
কাঞ্চননগরের ধুরুং খালের চরের কৃষক মফিজ জানান, মাঘের ওরশকে টার্গেট করে আমরা ভাণ্ডারী মুলার চাষ করি। আলহামদুলিল্লাহ কখনোই লোকসান দিতে হয়নি।
খিরামের সর্ত্তাখালের চরের কৃষক আমীর হোসেন জানান, তিনকানি জমিতে মুলা চাষ করেছি। গতবছর সমপরিমাণ জমি থেকে ২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, চরের মাটি খুবই উর্বর এবং উৎপাদিত ফসল অত্যন্ত পুষ্টিকর। চলতি বছর ভাণ্ডারী মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। এই চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। যে রোগের কারণে ফসল নষ্ট হচ্ছে তা আমরা সরেজমিনে গিয়ে কারণ উৎঘাটন করে অবশ্যই প্রতিকারের ব্যবস্থা নেব।
পূর্বকোণ/পিআর