চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার পুলিশকে ‘হাত কেটে নেয়ার হুমকি’ এমপি মোস্তাফিজের

বাঁশখালী সংবাদদাতা

৫ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১১:১৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সাথে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদের ফোনালাপের একটি অডিও পূর্বকোণের হাতে এসেছে।

 

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দু’জনের ছবিযুক্ত ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এ ফোনালাপ ভাইরাল হয়।

 

ফোনালাপ:

 

এমপি মোস্তাফিজ: ছনুয়ায় আমার লোক ধরার জন্য কেন পুলিশ পাঠাইছেন?

 

ওসি তোফায়েল: স্যার… কোথায় স্যার?

 

এমপি মোস্তাফিজ: ছনুয়া, ছনুয়া। এসআই হাফিজ।

 

ওসি তোফায়েল: না না, স্যার। ও তো এখন নেই স্যার। ওরা দুইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ওখানে নিয়মিত ডিউটিতে থাকে, স্যার। চলে আসতেছে, স্যার। নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

 

এমপি মোস্তাফিজ: কি জন্য গেছে ওখানে? আমার কোনো লোকজনের গায়ে যদি হাত দেয়, আমি হাত কেটে ফেলবো কিন্তু।

 

ওসি তোফায়েল: দেবে না স্যার। হাত দেবে না। আমি বলে দিচ্ছি।

 

এমপি মোস্তাফিজ: আমি হাত কেটে ফেলবো কিন্তু। এটা বলে দিলাম।

 

ওসি তোফায়েল: ওরা এখনও আছে নাকি স্যার?

 

এমপি মোস্তাফিজ: ওখানে নাকি আমাদের লোকজন ধরার জন্য এসআই হাফিজুর রহমান গেছে। ওখানে গিয়ে আমাদের লোক আলমগীরকে খুঁজতেছে।

 

ওসি তোফায়েল: না না স্যার। প্রশ্নই আসে না। ও তো চলে আসছে।

 

এমপি মোস্তাফিজ: এমনি ঘুরাফেরা করলে সমস্যা নেই। কিন্তু আমার কোনো লোকের ওপর হাত দিলে বহুত অসুবিধা হবে।

 

ওসি তোফায়েল: অবশ্যই স্যার। কখনোই হাত দিবে না, স্যার। আপনি যেভাবেই বলবেন, সেভাবেই হবে।

 

এমপি মোস্তাফিজ: আপনি তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠাইছেন।

 

ওসি তোফায়েল: স্যার ঐদিন তো আপনার সাথে কথা বললাম। পুলিশ পাঠাইনি, স্যার। আপনার বাড়িতে তো এমনি নিয়মিত যায়। আপনার নিরাপত্তার জন্য পাঠানো হয়েছে। আমি ঐদিন আমি আরও আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছি-যে। বলে দিয়েছি, এমপি স্যারের বাড়িতে গেলে সাদা পোশাকে যাবে।

 

এমপি মোস্তাফিজ: কি জন্য আসছিল?

 

ওসি তোফায়েল: স্যার এমনিতে গেছে। কোনো কারণে না। কাউকে ধরার জন্য না, কিচ্ছুই না।

 

এমপি মোস্তাফিজ: আচ্ছা…। চাম্বলের মুজিবের ওপরও যাতে কোনো রকমের ইয়ে না হয়।

 

ওসি তোফায়েল: হবে না স্যার, ইনশাআল্লাহ।

 

এমপি মোস্তাফিজ: ও ওপেন যেন কাজ করতে পারে। খেয়াল রাখিও।

 

ওসি তোফায়েল: অবশ্যই, স্যার। জ্বি স্যার, জ্বি স্যার। ওকে স্যার।

 

এমপি মোস্তাফিজ: ঠিক আছে।

 

এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফেজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমার সাথে কারো সাথে এ ধরনের ফোন আলাপ হয় নাই।

 

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাইল আহমেদ বলেন, যেখান থেকে সংবাদটির উৎস ওখানে প্রশ্ন করেন। তখন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। জেলা ডিএসবির সাথে যোগাযোগের জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

 

উল্লেখ্য, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ৩০ নভেম্বর ব্যাপক শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমার সময় তার সঙ্গীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার রাকিব উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের উপর চড়াও হন। এ সময় গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।

 

পরে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি মোস্তাফিজুর রহমানের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দেয়। তাতে বলা হয়, মোস্তাফিজুর রহমান বেশি লোকজন নিয়ে এসে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাংবাদিককে ‘মারধর ও হুমকির’ বিষয়টি অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে মামলায় সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি জানিয়ে বাদী হারুন মোল্লা জানান, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মামলা করা হয়। এ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে ৩ জানুয়ারি জামিন পান তিনি।

 

 

পূর্বকোণ/অনুপম/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট