চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় পিকনিকবাহী বাস ও পিকআপের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চার নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চার শ্রমিক। তারমধ্যে দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং কলাতলী এলাকায় এই দূর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাংয়ের করমুহুরী পাড়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে রিদুয়ান (৩৫), একই ইউনিয়নের পূর্ব বৃন্দাবিনখিলের সামাজিক পাড়ার মোজাফফরের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৪), একই এলাকার মৃত রশিদ আহমদের ছেলে আবু বক্কর (৩০) এবং একই এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন (৩৫)। আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে চিরিংগা হাইওয়ে থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) খোকন কান্তি রুদ্র বলেন, বুধবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে একটি পিকনিক বাস কক্সবাজারের উদ্যোশে রওয়ানা দেন। পিকনিক বাসটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার কলাতলী এলাকায় পৌছলে শ্রমিকবাহি একটি পিকআপের (মিনিট্রাক) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে চার নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন, আহত হন আরও চার শ্রমিক। তাৎক্ষনিক হতাহতদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গুরুতর আহত দুই শ্রমিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পিকনিকবাহি বাস ও শ্রমিকবাহি পিকআপের হেলপার ও চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি।
চিরিংগা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক বলেন, আইনী প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। চালক ও হেলপারকে আটক করতে পুলিশ অভিযান চাালাচ্ছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নিহত চারজনের বাড়ি একই ওয়ার্ডে এবং খুব কাছাকাছি। নিহতদের বাড়িতে কান্নার আহাজারি পড়ে গেছে। নিহতদের স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়রা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে। প্রতিবেশিরা এসে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে। নিহতদের সবার ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে। তাদের যে বাবা নাই তারা বুঝতে পারছে না। তারা অন্য বাচ্চাাদের সাথে খেলা করছে। অন্যদিকে পুুরুষরা নিহতদের মরদেহ গোসল করাতে ব্যস্ত। উঠানে খাটিয়া রাখা হয়েছে মরদেহ কবরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ৪টার পরপরই নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হবে। তাদের দাফনের জন্য নিজনিজ মসজিদের পাশে কবর খোঁড়া হচ্ছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে নিহত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, ভোর ৫টার দিকে কাজে যাওয়ার জন্য বের হয় তার স্বামী জয়নাল। কিন্তু ৮টার দিকে খবর আসে তার স্বামী গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখে তার স্বামীর নিথর দেহ হাসপাতালের লাশ ঘরে পড়ে রয়েছে। তাদের ঘরে তিনটি মেয়ে ও একটি শিশু সন্তান রয়েছে। জয়নালের মৃত্যুতে পরিবারে উপার্জন করার কেউ নাই। নিহত আবু বক্করের স্ত্রী ইয়াসমিন। গর্ভবতী নারী। আর কয়েকদিন পরই পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায় ছিলো তাদের অনাগত সন্তানের। কিন্তু সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিদায় নিলো হতভাগা পিতা আবু বক্কর। তাদের ঘরেও রয়েছে দুই সন্তান। স্বামী আবু বক্কর মারা যাওয়ায় গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইয়াসমিন।
নিহত মহিউদ্দিনের আত্মীয় মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, মহিউদ্দিন আমার ভগ্নিপতি। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনকার মতো বৃহস্পতিবার ভোরে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলার দরবেশহাট এলাকায় একটি ছাদ ঢালাইয়ের কাজে যাওয়ার জন্য বের হন ১২ জন শ্রমিক। কিন্তু কাজে যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ হারান চার শ্রমিক। আহত হন আরও চার শ্রমিক। নিহতদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তারা। তাদের হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এসব পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, দূর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.ফখরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভুমি) রাহাতউজ্জাজামান, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী।
পূর্বকোণ/জাহেদ/আরআর/পারভেজ