চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

তিন ধনাঢ্য প্রার্থীকে নিয়ে ‘ত্রিধারায়’ আওয়ামী লীগ

মোহাম্মদ আলী

২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনে তিন ধনাঢ্য প্রার্থীকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কোন নেতা কোন প্রার্থীর দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে সরব আলোচনার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জটিল সমীকরণও। মূলত আওয়ামী লীগের নেতারা যেদিকে বেশি ধাবিত হবেন, তারই জয়ের পাল্লা ভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 

এ আসনে ধনাঢ্য তিন প্রার্থী হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ ও সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী।

 

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িত সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। রাজনীতির নানা ধাপ পেরিয়ে তিনি এখন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রতীক পেলেও মহাজোটের কারণে মনোনয়ন ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এরই মাঝে একাধিকবার সিটি মেয়র নির্বাচন করার কথা শোনা গেলেও দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় তা আর হয়ে উঠেনি।

 

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবারই প্রথম নির্বাচনী মাঠে নাম লেখালেন তিনি। তবে দলীয় পরিচয়ে নয়, সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। তারপরও কেটলি প্রতীক নিয়ে গত কয়েকদিনের প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে গেছেন তিনি, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সমানে। নির্বাচনে নতুন মুখ হলেও চট্টগ্রাম-৮ আসনে তার নাম এখন মুখে মুখে।

 

নির্বাচনী মাঠে আবদুচ ছালাম নতুন মুখ হলেও পুরোনো খেলোয়াড় জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, তার প্রতীক লাঙ্গল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি খাগড়াছড়ি আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে ওই দুটি নির্বাচনে তিনি হেরে যান। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দু’বার প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দু’বারই তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এবারের নির্বাচনে এ আসনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

 

দলের সিদ্ধান্তের কারণে তাকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। তাতে নির্বাচনী মাঠে অনেকটা সুবিধা পেয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম। দিন-রাত হারাম করে তিনি মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন।

 

তবে আবদুচ ছালামকে অনেকটা অস্বস্তিতে ফেলেছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরী। নগর আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলি গ্রামে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি প্রার্থী হন চট্টগ্রাম-৮ আসনে। নির্বাচনে তাকে যোগ্য সময় দিচ্ছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতা। আ জ ম নাছির উদ্দিন ইতোমধ্যে বিজয় কুমার চৌধুরীর পক্ষে গণসংযোগ করতে মাঠে নেমেছেন। তাতে নতুন করে কষতে হচ্ছে ভোটের হিসাব।

 

বোয়ালখালী উপজেলা, চান্দগাঁও থানা এবং পাঁচলাইশ ও বায়েজিদের আংশিক এলাকা নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসন গঠিত। এ আসনে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ‘কালুরঘাট সেতু’। বোয়ালখালীবাসীর প্রাণের দাবি হচ্ছে এ সেতুটি নতুন করে নির্মাণ। প্রার্থীরা বরাবরই নির্বাচনে জয়ী হলে সেতুটি নির্মাণের আশ^াসও দিয়ে থাকেন। অতীতে সেতুটি নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল ও মোসলেম উদ্দিন আহমদও।

 

সবশেষ উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদও এটি নির্মাণের আশ্বাস দেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে তারা প্রত্যেকে জাতীয় সংসদে গিয়ে দফায় দফায় সেতু নির্মাণের দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। ধরনা দেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কালুরঘাট সেতুও আর নির্মাণ হয় না। তাতে দুঃখ ঘোচে না বোয়ালখালীবাসীর।

এবারের নির্বাচনেও দাবিটি সামনে নিয়ে আসেন ভোটারেরা। গণসংযোগে গিয়ে প্রার্থীরাও আশ^াস দিচ্ছেন নির্বাচিত হলে সেতু নির্মাণের। মূলত ‘কালুরঘাট সেতু’ নির্মাণ এ আসনের ভোটারদের প্রধান দাবি। এটি নির্মাণে যে প্রার্থীর উপর ভোটারেরা ভরসা রাখতে পারবেন, নির্বাচনে তারই জয়ের মালা পরার সম্ভাবনা বেশি বলে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

 

ভোটারেরা জানান, চট্টগ্রাম-৮ আসনে ভোটের লড়াইয়ে ১০ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ ও সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বেশি।

 

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনএফের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন), ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (চেয়ার), ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল নবী (মোমবাতি), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহিবুর রহমান বুলবুল (ডাব), কল্যাণ পার্টির মো. ইলিয়াছ (হাতঘড়ি), এনপিপির মো. কামাল পাশা (আম) ও তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা (সোনালি আঁশ)। তারাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি¦তা গড়ে তুলতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট