চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

ফজলে করিমই হেভিওয়েট প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন নিয়ে এবারও সহজ অঙ্ক কষছেন ভোটাররা। এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী একজনই। তিনি হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।

 

তবে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আরও চার প্রার্থী। তাদের সবাই নতুন মুখ। ফলে এবারও ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন চারবারের সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী।

 

এ আসনে নৌকার প্রার্থী ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত সফিক-উল আলম চৌধুরী (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী (সোনালী আঁশ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের স ম জাফর উল্লাহ (চেয়ার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট শফিউল আজম (ট্রাক)।

 

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে অবিরাম প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ ও পথসভা করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন উপজেলার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটছেন তারা। তুলে ধরছেন উন্নয়নের কথা।

 

১৪ ইউনিয়ন, পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ফজলে করিম চৌধুরী। এতে উৎসবমুখর নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ফজলে করিম চৌধুরী হাট-বাজার, বাড়ি বাড়ি ও ঘরে ঘরে ছুটে যাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে প্রচারণা।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম (ট্রাক) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী স ম জাফর উল্লাহর (চেয়ার) গণসংযোগ কিছুটা চোখে পড়ে। তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি। তবে দুয়েকদিনের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

 

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, আমি মনোনয়ন দাখিলের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম যত শক্তিশালী প্রার্থীই হোক, আমার কোন সমস্যা নেই। আমি খালি মাঠে গোল দিতে বিশ্বাসী নই।

 

তিনি বলেন, রাউজান একসময় সন্ত্রাস ও অনুন্নত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২৮ বছর রাউজানের মানুষের সুখ-দুঃখে ছিলাম। রাউজানকে সারাদেশের মডেল উপজেলায় পরিণত করেছি। সবকিছুতেই এগিয়ে এখন রাউজান। রাউজানকে মানুষ এখন মডেল এবং সারাদেশের মধ্যে একটি ভিন্ন উপজেলা হিসেবে চেনে। শিক্ষা, অবকাঠামোসহ সবক্ষেত্রে রাউজানকে অনুকরণ করে অন্য উপজেলাগুলো। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও ভোটারদের যাকে প্রয়োজন তাকেই বেছে নেবেন। তবে নৌকাকে বিজয়ী করা হলে শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী রাউজান হবে স্মার্ট উপজেলা।

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবদুল ওহাব বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে প্রত্যেক এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা ভোট প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। দলীয়ভাবে প্রত্যেক এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে।

 

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, রাউজানের ইতিহাসে সফল একজন সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তার বিকল্প ভাবতে পারে না রাউজানবাসী। কাজেই ফজলে করিমের বিজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।

 

এদিকে, জাপা প্রার্থী সফিক-উল আলম চৌধুরী (লাঙ্গল) বলেন, এলাকায় এলাকায় পোস্টার লাগানো হচ্ছে। দুয়েকদিনের মধ্যে গণসংযোগ শুরু করব।

 

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী (সোনালী আঁশ) বলেন, আমার বাড়ি হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শায়। রাউজানে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে। তাদের সাথে এবং মোবাইলে আমার প্রচার চলছে। নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার হবে- এর উপর ভিত্তি করে প্রার্থী হয়েছি।

 

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী স ম জাফর উল্লাহ (চেয়ার) বলেন, প্রচারণা শুরু করেছি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য আহ্বান করছি।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট শফিউল আজম (ট্রাক) বলেন, রাউজানের জনগণ অবাধে ভোট দিতে পারলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। আমি জনগণকে স্মার্ট রাউজান উপহার দিতে চাই। আমি সংসদে গিয়ে রাউজানের মানুষের কথা বলতে চাই। দেশের মানুষের জন্য আইনের উপর কাজ করতে চাই।
আবদুল হালিম নামে এক সাধারণ ভোটার বলেন, ফজলে করিম চারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের কারণে রাউজানে ফজলে করিমের কোন বিকল্প ভাবতে পারে না এলাকাবাসী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, চট্টগ্রামে যে ক’টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত, তার একটি হচ্ছে রাউজান।

 

ফজলে করিম চৌধুরী এবার ৭ম বারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে রাউজান আওয়ামী লীগের একমাত্র কান্ডারি হয়ে উঠেন তিনি। তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৩ সালের পর সংসদীয় এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আসনটি অধিকাংশ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর দখলে ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে ফজলে করিম চৌধুরীর হাত ধরে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। তার কারণে রাউজান উপজেলা এখন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত।

 

১৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) সংসদীয় আসন। এর পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু হ্যারিটেজ হালদা নদী। দক্ষিণে কর্ণফুলী নদী। এ উপজেলার পশ্চিমে হাটহাজারী, দক্ষিণে বোয়ালখালী, পূর্বে রাঙ্গুনিয়া ও পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরে ফটিকছড়ির অবস্থান। উপজেলার আয়তন ২৪৩ বর্গ কিলোমিটার। উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৬,৫০,৫৩৬ জন। পুরুষ ৩,০৬,২৩০ ও মহিলা ৩,৪৪,৩০৬।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট