চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

শাহজাহানে অস্বস্তিতে আনিসুল

মোহাম্মদ আলী

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে সর্বোচ্চ ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার নির্বাচিত হন বিএনপির সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।

 

তবে বিজয়ের ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান বলা চলে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। দল পরিবর্তন ও জোটের সুবিধা নিয়ে তিনি ছয়বারই বিজয়ের হাসি হেসেছেন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসনে জাতীয় পার্টির টিকিটে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।

 

কেন্দ্র থেকে তাকে সমর্থন দেওয়ায় শেষ মুহূর্তে এসে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন আওয়ামী লীগের এম এ সালাম। তাতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ভোটের হিসাবে সুবিধা বাড়লেও তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ দিচ্ছেন না স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। নির্বাচনে তার প্রতীক কেটলি।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরইমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সমর্থন দেওয়ায় নির্বাচনে মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে। তাতে ব্যারিস্টার আনিসের ভোটের চিত্র পাল্টে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এ আসনে মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী নন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

 

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সভায় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে উপস্থিত ৫৩ জনের মধ্যে ৫১ জনই মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীকে সমর্থনের পক্ষে মতামত দেন। অবশিষ্ট দু’জন আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে সমর্থনের পক্ষে মত দেন। তাই আমরা অফিসিয়ালি নয়, ‘টেকনিকেলি’ মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছি। কারণ কেন্দ্র থেকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। তাই কোন কাদা ছোড়াছুড়ি না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনে কাজ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে বিজয়ী হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদলে সরকারে আসে জাতীয় পার্টি। এরপর ১৯৮০’র দশকের শুরুতে তিনি বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

 

জাতীয় পার্টি থেকে একই আসনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এই নির্বাচনের তিন বছরের মধ্যে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টির টিকিটে জয়ী হন। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির টিকিটে বিজয়ী হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনেও বিজয়ী হন তিনি।

 

২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচন করলেও সমর্থন পান আওয়ামী লীগের। তাই ওই তিনটি নির্বাচনে তিনি সহজে জয়ী হন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আওয়ামী লীগ কেন্দ্র থেকে ব্যারিস্টার আনিসকে সমর্থন জানালেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃত্ব তার পক্ষে নেই। তারা এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহানের পক্ষে একাট্টা হচ্ছেন। তাই ভোটের আগে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চিন্তার কারণ হতে পারেন শাহজাহান।

 

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী ছাড়া হাটহাজারী আসনে প্রার্থী রয়েছেন আরও ছয়জন। তারা হলেন- তৃণমূল বিএনপির মো. নাজিম উদ্দিন (সোনালী আঁশ), সুপ্রিম পার্টির কাজী মহসীন চৌধুরী (একতারা), ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ মোখতার আহমেদ (মোমবাতি), বিএনএফের আবু মোহাম্মদ সামশুদ্দিন (টেলিভিশন), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ছৈয়দ হাফেজ আহমদ (চেয়ার) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নাছির হায়দার করিম (ঈগল)। নির্বাচনে তারাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন