সীতাকুণ্ড উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী মো. সালাউদ্দিন। উপজেলার ৫ নম্বর বাড়বকু- ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়াডের্র স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী তিনি। মাঠ পর্যায়ে শিশুদের টিকা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন সালাউদ্দিন। বেশ কিছুদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত খোঁজ মিলেছে। স্বাস্থ্য সহকারী সালাউদ্দিন এখন চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদের প্রার্থী হয়ে ভোট চাইতে চষে বেড়াচ্ছেন সীতাকু-ের প্রত্যন্ত এলাকা।
সরকারি চাকরি আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী- চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ নেই। তবুও ‘সংসদে যাওয়ার ইচ্ছে’ তাঁর। তথ্য গোপন করে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সবার চোখ ফাঁকি দিতে নির্বাচন কমিশনে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ব্যবসায়ী। বরাদ্দ পেয়েছেন ‘ঈগল’ প্রতীকও। যা নিয়ে পুরোদমে প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, সরকারি চাকুরে হওয়ায় আগামী ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনী দায়িত্বে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নাম আছে সালাউদ্দিনের। অন্যদিকে- তিনি ভোটের জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। স্বাস্থ্য সহকারীর এমন কর্মকা-ে বিব্রত খোদ স্বাস্থ্য বিভাগও।
অবশ্য, বিষয়টি নজরে আসার পর পরই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। পাশাপাশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে বেতন-ভাতাদি বন্ধ রেখেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা যায়, পুলিশের চাকরি ছেড়ে ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য সহকারী পদে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন মো. সালাউদ্দিন। যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি তিনি বাড়বকু- ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত। গত ২০ ডিসেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পর গত দু’দিন আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নজরে আসে স্বাস্থ্য বিভাগের। এরপরই বিষয়টি নিয়ে কি করা যায়, সে বিষয়ে কর্তাব্যক্তিদের তোড়জোড় শুরু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সীতাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিষয়টি নজরে আসার পরপরই সালাউদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু তার উত্তর না দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। যে কারণে তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতিও নেননি। তাছাড়া নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দায়িত্বেও তার নাম দেওয়া হয়েছে। তাই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।’
খবর নিয়ে জানা যায়, হলফনামায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে মনোনয়ন দাখিল করলেও যাচাই-বাছাইয়ের সময় ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় সালাউদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে স্বাস্থ্য সহকারী সালাউদ্দিন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। সর্বশেষ প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে প্রচারণায় নামলে বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এদিকে, আলোচ্য বিষয়ে গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। চিঠিতে তিনি সরকারি এ কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
সরকারি চাকরিতে থাকাবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তাকে চাকরি থেকে অব্যহতি নিতে হবে। লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে।’
এদিকে, স্বাস্থ্য সহকারীর এমন কা-ে স্বাস্থ্য বিভাগে অস্বস্তি থাকলেও ‘রকেট’ প্রতীক নিয়ে পোস্টারিংসহ পুরোদমে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সালাউদ্দিন। নিয়মিত ভোট চেয়ে ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তিনি।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন সরকারি চাকরির বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমি এখন নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত। আপনারা আমাকে তুলতে পারেন আবার ডোবাতেও পারেন। এসব নিয়ে পরে কথা বলব।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে. এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। তার কর্মস্থল (স্বাস্থ্য বিভাগ) থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও আমাকে কোন অনুলিপি দেয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পূর্বকোণ/পিআর