১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোদ্ধা ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করি। এলাকার সাধারণ মানুষকে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিক আহমদ এ কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, আমরা এলাকার উঠতি যুবকরা আমার সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরীর সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলাম যুদ্ধে অংশ নিতে হবে। সাধনপুর রাতারকুল বাড়ি থেকে শঙ্খ নদী ও কর্ণফুলী নদী পার হয়ে দিনক্ষণ ঠিক করে চাক্তাই পৌঁছি। আহমদ হোছেনের বন্ধুর বাসায় অবস্থান নিই। মিরসরায়য়ে কেফায়াত উল্লাহ্ধসঢ়;র কাছে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা আসল। চট্টগ্রাম শহরে অবস্থানকালীন সময়ে এক বন্ধুর বাসায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র সরবরাহ করার জন্য। ঠিক ঐ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজ সিদ্ধান্ত দিলেন ভারতে দেরাদুনের তন্দুয়ায় ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় সামরিক কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডা. মাহফুজ একটি চিরকুট লিখে বলে দিলেন মিরসরাই কেফায়াত উল্লাহর কাছে যোগাযোগ করারা জন্য। বাসযোগে রওনা দেওয়ার পথে বার আউলিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চেকপোস্টে বাস তল্লাশি করে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টুপি দাড়ি থাকায় সৈন্যরা বুঝে উঠতে পারেনি। উর্দু ভাষা জানা ছিল বলে আমি পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে এলাকার সাধারণ মানুষের মত কথা বলি। উর্দৃু না জানলে হয়ত সেদিন মৃত্যু হত। বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বাজারে গিয়ে কেফায়াত উল্লাহ্ধসঢ়;র কথা জিজ্ঞাস করতে গিয়ে তার দেখা মিলে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিক আহমদ বলেন, বাঁশখালীর থানা আক্রমণ, থানা দখল, ওয়াপদা অফিস আক্রমণে অংশগ্রহণ করি। সাধনপুর পাহাড়ি এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ছমি উদ্দীনের নেতৃত্বে থাকা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণে যোগ দিই। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসে সাধারণ মুক্তিকামী মানুষদেরকে পাকিস্তানি আল বদর হানাদার বাহিনী নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সদস্য ছিল ৪০-৪৫ জন। ১৯৭১ সালের ১৯ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার আল বদরদের সাথে নিয়ে ১০টি সাজোয়া গাড়িতে ভারী অস্ত্র সহকারে বাণীগ্রাম এলাকায় অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিরীহ ২২ জন মানুষকে হত্যা করে। একইভাবে পালেগ্রাম কোকদ-িসহ বিভিন্ন এলাকার ৪০ জন মানুষকে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে এনে স্বাধীনতা বিরোধীরা গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়।
তিনি জানান, সাধানপুর ইউনিয়ন পরিষদ আক্রমণের সময় সার্জেন্ট মহিউল আলম শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা বিলে ও অভ্যান্তরীণ সড়কে অবস্থান নিয়ে ১১ ডিসেম্বর গুনাগরী ওয়াফদা অফিস আক্রমণ করে। এই সময় স্বাধীনতা বিরোধী অনেক শত্রুকে আটক করে বাণীগ্রাম নিয়ে এসে শাস্তি প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাঁশখালী হানাদার মুক্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার অস্ত্রগুলো মুক্তিযোদ্ধারা দখলে নেয়। ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিক আহমদ ৬ ছেলে ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক।
পূর্বকোণ/পিআর