প্যারা শিক্ষক হিসাবে চাকরি করে বেতন না পেয়ে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ হয়রানিতে তিক্ত হয়ে টাকা আদায়ের অভিনব কায়দা বেঁচে নিল যুবক তৌহিদুল ইসলাম নয়ন। ১০ মাস চাকরি করার পর বেতন নিয়ে তালবাহানা করায় প্রধান শিক্ষকের মোটরসাইকেলে তালা লাগিয়ে দেন তিনি। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায়।
তৌহিদুল ইসলাম নয়ন আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাজার এলাকার নুরুজ্জামান পাড়ার মো. মঞ্জুর আলম সওদাগরের ছেলে। অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম ফরিদ আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলায়।
তৌহিদুল ইসলাম নয়ন জানান, শিক্ষক সংকটে আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অচল অবস্থা তৈরি হলে স্থানীয় অভিভাবকরা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মানববন্ধন করে। সে সময় তিনিসহ মোট তিনজনকে আলীকদম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্যারা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। মাসিক সম্মানী ধরা হয় ৫ হাজার টাকা। ১০ মাস চাকরি করলেও তাদের বেতন দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন বেতন না দেয়ায় তারা চাকরি ছেড়ে চলে আসে। প্রতিজন শিক্ষকের ১০ মাসের বেতন ও ২টি বোনাসসহ মোট ৬০ হাজার টাকা পাওনা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ফরিদ এই বেতনের টাকা না দিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘুরাতে থাকে। বিষয়টি সমাধানে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হন। কোনভাবেই বিষয়টি সমাধান হয়নি ও কেউ সমাধানে এগিয়ে আসেননি।
তিনি আরও বলেন, আমার মা অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। মাকে চিকিৎসা করার টাকা নেই। নিরুপায় হয়ে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আলীকদম সদরের চৌমুহনী এলাকা দিয়ে আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ফরিদ মোটর বাইকে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় আমি বকেয়া বেতনের জন্য মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে বকেয়া বেতন দাবি করি।
প্রধান শিক্ষক আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে বিদ্যালয় থেকে নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে তার বাইকের চাবি কেড়ে নিয়ে বাইকটিতে তালাবন্ধ করে দিই। বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকরা ফেসবুকে দিলে বিষয়টি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে আলীকদম থানা থেকে একজন এসআই আমাকে থানায় যেতে বলে। সমাধানের কথা বলে পুলিশ মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে গেছে।
তৌহিদুল ইসলাম নয়ন আরও জানান, ইউএনও ও জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের বেতন দিয়ে দিতে বললেও ওই প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ফরিদ ইচ্ছে করে আমাদের টাকা না দিয়ে ঘুরাতে থাকে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ফরিদ বলেন, বকেয়া বেতনের জন্য আমার মোটরসাইকেলে তালা দেয় অতিথি শিক্ষক (প্যারা শিক্ষক) তৌহিদুল ইসলাম নয়ন। বিষয়টি নিয়ে আমি আলীকদম থানায় অভিযোগ করেছি।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার তবিদুর রহমান জানান, উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। মোটরসাইকেল থানা হেফাজতে আছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ওই প্রধান শিক্ষকের বাড়ি পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলায়। নিজের জন্মদাত্রী মা কে মারধর করার অভিযোগে কয়েকবছর আগে জেলও খাটে এই শিক্ষক। এছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে শিক্ষকতা জীবনে কয়েকবার শোকজ ও তাৎক্ষণিক বদলী করা হয় এই শিক্ষককে।
পূর্বকোণ/রফিক/জেইউ/পারভেজ