জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির কারণ হিসেবে দূষণের তালিকায় জোরালোভাবে যে নামটি আলোচিত হয়, তা হলো প্লাস্টিক দূষণ। সময়ের সাথে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতোটাই বেড়ে চলেছে যে, প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য এখন জলজ প্রাণী, খাদ্য চেইন ও মানুষের জীবনের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যগুলোর খাল, নালা, নদী হয়ে সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে সমুদ্রে। প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপকরণের দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা, মাটির উর্বরতা হ্রাস, সামুদ্রিক মাছ ও প্রানীর জন্য হুমকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়ে প্লাস্টিক জাতীয় পন্য ব্যবহারে আরও বেশি সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দাতব্য সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনীর। বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।
কক্সবাজার সৈকতের বালির উপর নির্মিত পাঁচটি ভাস্কর্য দিয়ে দেখানো হয়েছে মানুষের আবাসস্থল, সেটা হোক বাসাবাড়ি কিংবা আবাসিক হোটেল। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে ভূমিতে, জলাশয়ে তথা সমুদ্রে গিয়ে পরে এবং জাহাজের মতো ভাসতে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, গাংচিল (পাখিদের প্রতিনিধি) তাদের খাবার মনে করে তা গলাধঃকরণ করে যা পরবর্তীতে হজম হয়না। ফলে অকালে মারা যায় নিষ্পাপ প্রাণী ও পাখিগুলো। বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু হয়। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় আমাদের অসচেতনভাবে ফেলে দেওয়া যত্রতত্র প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে মূলত দর্শকদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখাতে চেষ্টা করা হয়েছে নীরবে আমাদের অগোচরে, অজান্তে প্লাস্টিক কিভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা ও ভাগ্য পরিবর্তনে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে নানা রকম সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে থাকে। গত বছর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সাথে যৌথ উদ্যোগে সেন্টমার্টিনের জনসাধারণকে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার দেওয়া, কক্সবাজার সৈকতে ‘প্লাস্টিক দানব’ প্রদর্শনীর আয়োজন করা, পর্যটকদের প্লাস্টিকের বিনিময়ে উপহার দেওয়া কার্যক্রম প্রশংসিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও প্লাস্টিক একচেঞ্জ স্টোর স্থাপনের পাশাপাশি পর্যটকদের সচেতন করতে আয়োজন করা হয়েছে চার মাস ব্যাপী এই নমুনা প্রদর্শনীর। ব্যবহার করা একটি খালি প্লাস্টিক বোতল মূল্য হিসেবে জমা দিয়ে প্রবেশ করা যাবে প্রদর্শনী দেখতে।
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন “পরিবেশ ও প্রতিবেশ কে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর বিভিন্ন ভিন্নধর্মী উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করে থাকে। জেলা প্রশাসন তাদের সে উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত”।
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ বলেন, “কক্সবাজারে শীত মৌসুমে সারাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসে। এই সময় পর্যটকরা যেন যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলেন এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল নিয়ে সচেতন হন, এই বিষয়ে সচেতন করতেই মূলত এই আয়োজন। বিদ্যানন্দ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে পাশে পেয়েছে বলে সম্ভব হয়েছে এমন ভিন্নধর্মী আইডিয়া বাস্তবায়ন করা। আশা করছি বিনোদনের পাশাপাশি মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনে এই প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
কিশোর কুমার দাশের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সারবিক) বিভীষণ কান্তি দাশ, বিচ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইঞ্জারুল হক, বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ