ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলে বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতি হবে। এই আশংকায় তড়িঘড়ি সবজি তুলে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে এসে উল্টো বিপাকে পড়লেন অগণিত কৃষক। তাদের আনা সবজি সিন্ডিকেট করে নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করেছে মধ্য স্বত্বভোগী পাইকারদের সিন্ডিকেট। এতে বাধ্য হয়ে স্বল্প মূল্যে সবজি বিক্রি করে চোখে জল নিয়ে কৃষকরা বাড়ি ফিরলেও সেই সবজি মাত্র কয়েক’শ গজ দূরের খুচরা বাজারে দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে চক্রটি।
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার বিকালে সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে বড় সবজি বাজার পৌরসদরের মোহন্তের হাটে ঘুরে দেখা গেছে, শত শত কৃষক নানান সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু হালকা বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাইকাররা সিন্ডিকেট করে প্রত্যেকটি সবজির নির্দিষ্ট নাম মাত্র দাম নির্ধারণ করে দেয়। এর বেশি দামে কোন পাইকার কিনছেন না। ফলে হতাশ কৃষকরা শেষ পর্যন্ত এই দামেই বিক্রি করেছেন সবজি।
পরিদর্শনকালে এ বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক টেরিয়াইল এলাকার কৃষক মো. নুরুল আলম ও আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে এ ভয়ে আমরা ঢেরস, বরবটি, লাউ, লাল শাক, পালং শাক নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখছি পাইকাররা সব সিন্ডিকেট করে একেকটি সবজির একেক দাম ঠিক করে রেখেছে। পাইকাররা লাল শাক ৫ টাকা, পালং শাক ৮-১০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮টাকা, তিতকরলা ৩০ টাকা কেজি, বরবটি ১২ টাকা, বেগুন ২৫ টাকা, টমেটো ৭০-৮০ টাকা, মূলা শাক ৫ টাকা, কচু পিস ১০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া পিস (২-৩ কেজি) ২০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ১০-১৫ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা, ধনে পাতা কেজি ১০-১৫ টাকা, ঝিঙ্গা ২০ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে। এর বেশি দামে কেউ কিনছে না। বাধ্য হয়ে তাদের বেঁধে দেওয়া নাম মাত্র মূল্যে সবজিগুলো বিক্রি করছি আমরা।
তারা বলেন, এই সবজিগুলো ক্ষেত থেকে তুলে সিএনজি টেক্সিতে করে আনতে আমাদের যে খরচ হয়েছে সেই দামও উঠেনি সবজি বিক্রি করে।
চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে অপর এক কৃষক নুনাছড়ার সাজ্জাদ আলী, মুরাদপুরের কৃষক আইয়ুব আলীও প্রায় অভিন্ন বক্তব্য রেখে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের লোকসান থেকে বাঁচতে সবজি নিয়ে বাজারে এসে আরো বড় লোকসানের শিকার হয়েছি আমরা। এসব সিন্ডিকেট আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে।
তারা বলেন, এসব সবজি উৎপাদন করতে গিয়ে যে পরিমাণ সার, কীটনাশক, শ্রমিক মুজুরি ও আমাদের শ্রম ও ব্যয় হয়েছে তাও উঠছে না। অথচ আমাদের কাছ থেকে সবজি কিনে মাত্র দুই’শ গজ দূরের খুচরা সবজি বাজারে তারা এসব সবজি বিক্রি করছে ২-৩ গুণ বেশি মূল্যে। কৃষকরা বলেন, আমরা যারা উৎপাদন করছি তারা দাম পাচ্ছি না। হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণও করতে না পারায় অল্প মূল্যে হলেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে স্থানীয় এক পাইকার মো. নুরুল আনোয়ার বলেন, আমরা তো চাইবই যে একটু কম দামে কিনতে। কৃষকরা না বিক্রি করলে তো আমরা কিনতে পারতাম না।
চট্টগ্রামের মুনছুরাবাদ থেকে আসা অপর এক পাইকার মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আজকে অনেক কম মূল্যে সবজি পেয়েছি। আগে যে সবজি কিনতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হতো এখন তা কিনেছি ২৫ হাজার টাকায়।
পূর্বকোণ/আরডি