চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে ‘এলেন শামীম’র আস্তানায় র‌্যাবের অভিযান, গ্রেপ্তার ৩

রাঙ্গুনিয়া সংবাদদাতা

১৪ নভেম্বর, ২০২৩ | ৬:১৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ মাদক সম্রাট আজিজুল হক শামীম প্রকাশ এলেন শামীমের (৩৫) আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‍্যাব-৭।

 

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড, পশ্চিম কোকানিয়া ছিড়াটিলা গ্রামে এই অভিযান চালানো হয়।

 

অভিযানে তিনটি দেশীয় অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ মাদক, সিসিটিভি ক্যামরাসহ আস্তানা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ডিভাইস উদ্ধার হয়েছে। তবে এলেন শামীম পালিয়ে গেলেও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

 

তারা হল, উপজেলার দক্ষিণ কোদালা এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে ওমর ফারুক (২২), রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকার ইউসুফ আলী চৌকিদার বাড়ির মোহাম্মদ মফিজের ছেলে মোহাম্মদ আরিফ (২২) এবং নোয়াখালী এলাকার মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মুন্সির ছেলে মোহাম্মদ সাকিল (২১)। পলাতক শামীম পৌরসভার উত্তর ঘাটচেক এলাকার মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে।

 

অভিযানকালে সরেজমিনে পারুয়া ইউনিয়নের গহীন জঙ্গলে গিয়ে দেখা যায়, র‍্যাব-৭ এর একটি দল সেখানে অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে র‍্যাব পৌঁছার আগেই পাহাড়ি পথে পালিয়ে যায় শামীম। একপর্যায়ে ছিড়াপাহাড় নামক একটি পাহাড় থেকে লোহার দুটি বক্সের ভেতর দুটি ট্রাঙ্ক পাওয়া যায়। বক্সের লকার ভাঙতেই ভেতরে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মাদক। যেখানে আনুমানিক ২০ কেজি গাজা, ৪০ বোতল ফেনসিডিল, বিপুল ইয়াবা, মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়।

 

এ সময় শামীমের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি দেশীয় শর্টগান পাওয়া যায়। সড়কের বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে অত্যাধুনিক ভয়েস রেকর্ডার সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। এছাড়া আস্তানার ভেতর শামীমের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর প্রমাণ সংগ্রহ করে র‍্যাব। শামীমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র‍্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট তৌকির। তবে অভিযানে কি কি জব্দ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সংবাদ সম্মেলনের সাহায্যে বিস্তারিত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন।

 

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদকের কারবার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে সে। তার এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং সরকার দলীয় বেশ কিছু নেতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা যুবলীগের এক নেতার উপর প্রকাশ্যে হামলা চালানোর পর থেকে প্রথম আলোচনায় আসে সে। এরপর পোমরা ইউনিয়নের গোচরা বাজারে কাপ্তাই সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালানোর কয়েকদিনের মধ্যেই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয় শামীম। সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম। তার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘাটচেক কেন্দ্রীক এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। যার হেডকোয়ার্টার হিসেবে সে পারুয়া ইউনিয়নের কোকানিয়া পাহাড়ি জনপদকেই বেছে নিয়েছে। অত্যাধুনিক সিসিটিভির সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হত আস্তানার মাদকের কারবার।

 

এই ব্যাপারে কোকানিয়া এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় কৃষি কাজ করতেন। তবে শামীম আস্তানা স্থাপনের পর থেকেই তাকে সেখানে যেতে বাধা দিত। এরপরও নিজ কৃষি ক্ষেতে যাওয়ার সময় শামীমের লোকজন একসময় তাকে ব্যাপক মারধর করে। এমনকি মারধরের একপর্যায়ে কৃষক নুরুল ইসলামকে স্থানীয় একটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয় বলে তিনি জানান।

 

কথা হয় স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান, মো. ইব্রাহিম ও মোহাম্মদ জাফরের সাথে। তারাও জানান, শামীম ঘাটচেকে বসে সিসিটিভির সাহায্যে কোকানিয়া এলাকার আস্তানা নিয়ন্ত্রণ করত। দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করত। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের কারবার। দ্রুতগামী মোটরবাইক নিয়ে চলার সময় অনেক মুরগীও সে মেরে ফেলেছে। এমনকি স্থানীয়দের পুকুরের মাছ, বিলের ধান সে নিয়ে ফেলত। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে তারা জানান।

 

এদিকে র‍্যাবের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

 

পূর্বকোণ/জিগার/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট