চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

দু’দেশের যৌথ উদ্যোগের দাবি বিশেষজ্ঞদের

হুমকিতে ফেনী নদীর মৎস্যভাণ্ডার

নিজাম উদ্দিন লাভলু

৭ নভেম্বর, ২০২৩ | ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অসাধু ব্যক্তি বিষ প্রয়োগ করে ফেনী নদীতে মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এক সময়ের প্রাকৃতিক মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত এ নদীতে এখন মাছের অস্তিত্ব বিপন্নের পথে।

 

বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ এরইমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিষ প্রয়োগে মাছের বংশ নিধন চললেও সীমান্ত নদী হওয়ায় কেউ ভুমিকা রাখছে না।

 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, একসময় এ নদীতে প্রচুর পরিমাণ বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস, চিতল, শোল, শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেতো। দু’দেশের বহু পরিবার নদীর মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নদীটি এখন প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বিষ প্রয়োগের কারণে শুধু মাছই নয়, কচ্ছপসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী ও সরীসৃপের অস্তিত্বও বিপন্নের পথে।

 

জানা যায়, নদীর রামগড় ও ভারতের সাব্রুম অংশের উজানের বিভিন্ন স্থানে বিষ প্রয়োগ করা হয়। বিষাক্ত জংলী লতা গাছ ও কীটনাশক ওষুধ নদীর উজানে পানিতে মিশিয়ে দেয়ার পর স্রোতে নদীর পুরো ভাটি অংশে ছড়িয়ে যায়। এতে ছোট-বড় সবধরনের মাছ বিষক্রিয়ায় পানিতে ভেসে ওঠে। পরে ওষুধ প্রয়োগকারী ও তীরবর্তী বাসিন্দারা নদীতে নেমে মৃত ও অর্ধমৃত মাছগুলো ধরে নিয়ে যায়। বিষক্রিয়ায় মৃত মাছ হাট-বাজারেও বিক্রি করে শিকারীরা।

 

এদিকে, স্থানীয় আনন্দ মোহন বৈষ্ণব খোকন জানান, কাশিবাড়ি এলাকায় গতকাল সোমবার ভোররাতে কে বা কারা নদীর পানিতে বিষ দেয়। স্রোতে এ বিষ নদীর ভাটি অংশে ছড়িয়ে যায়। এতে ছোট-বড় সবধরনের মাছ বিষক্রিয়ায় ভেসে ওঠে। দু’পাড়ের অসংখ্য মানুষ এ মাছ সংগ্রহ করতে নদীতে নেমে পড়ে। প্রতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে এভাবে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার শুরু হয় বলেও জানান তিনি।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ইউএনও স্যারের কাছ থেকে খবরটা পেয়ে বিষ প্রয়োগকারীদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ তাদের তথ্য দিতে পারেনি।

 

তিনি বলেন, সীমান্ত নদী হওয়ায় যখন-তখন সেখানে কোন অভিযান চালানো যায় না। এক্ষেত্রে বিজিবির সহযোগিতা প্রয়োজন।

অন্যদিকে, ফেনী নদী নিয়ে গবেষণাকারী ভারতের সাব্রুমের প্রবীণ লেখক ও গবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধনের সাথে সোমবার রাতে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি জানান, ফেনী নদীতে একসময় ইলিশ, গলদা চিংড়ি মাছও ধরেছে এখানকার মানুষ। প্রায় ১০০ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেতো। এখন মাছ নেই বললেই চলে।

 

তিনি আরও জানান, ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে প্রতি বছরের মত এবারও বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ হাজার পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়েছে ফেনী নদীতে। কিন্তু বিষ প্রয়োগের কারণে মাছের অস্তিত্ব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, ফেনী নদী ও প্রাকৃতিক মৎস্য বাঁচাতে দুই দেশের সরকার যৌথভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নদীর দুই তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং নাব্যতা বাড়াতে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে নদী ড্রেজিং করা দরকার।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন