চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য এক ডজন প্রার্থী। ২০১৪ সালের পর থেকে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনে এই আসনটি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সহজে বিজয়ী হয়।
আগামী ২০২৪ সালেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নৌকার বিজয়কে সুনিশ্চিত করে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করতে মরিয়া হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আসনটি পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তবে বাঁশখালীর এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলেই রয়েছেন একাধিক মনোয়নপ্রত্যাশী। নিরব ভূমিকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোনয়ন কে পাচ্ছেন এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক মহলে আলোচনা এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেশের উন্নয়নের কথা বলছেন, নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা শুরু করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আকার ইঙ্গিতে তিরষ্কার, ঘৃণামূলক বক্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ইউনিয়ন ওয়ার্ড ও সেন্টার কমিটি গঠন করেছে। তারা নির্বাচনী আসনের উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। অনেকটা গোপনে হলেও বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মকা-ের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন : দলীয় কোন্দলের কারণে প্রার্থী বেশি থাকায় এ আসন নিয়ে টেনশনে রয়েছে আওয়ামী লীগের জেলা ও কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে নৌকার প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান (সিআইপি), দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ কবির লিটন, সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলতানুল কবির চৌধুরীর সন্তান বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালীব সাদলী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য, ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সরওয়ার আলম ও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ তাঁতীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জমির উদ্দিন সিকদার। অপরদিকে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন হলে জোট- মহাজোট থেকে এখানে হেভিওয়েট প্রার্থী হতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত জোটগত নির্বাচন করলেও এবার জামায়াত জোটে না থাকায় শক্তি কমেছে বিএনপির। আবার বাঁশখালীতে বিএনপির ভিতরে রয়েছে দুইটি গ্রুপ। এ আসনে স্বাধীনতার পর বিএনপি জয়লাভ করেছে ৫ বার। তারমধ্যে ৪ বার একাই জয়ী হয়েছে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আসবে নতুন মুখ। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দুই পুত্র জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট ইফতেখার হোসেন মহসিন। অপরদিকে নাম শোনাা যাচ্ছে জেলা বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী।
অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের ক্ষেত্রেও একইভাবে বিএনপিকে দর কষাকষি করতে হবে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামের সাথে। প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এডভোকেট এম. নাসের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী ফ্রন্ট (মতিন) অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম আশরাফী।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের শাহ-ই-জাহান চৌধুরী। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত হন বর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক চসিক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। পরে তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের সুলতান-উল-কবির চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের দুই দফা ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেন, পশ্চিম বাঁশখালী এলাকায় প্রায় ২৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে আনোয়ারা হতে পেকুয়া সীমান্ত পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের জন্য টেন্ডার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া প্রধান সড়ক, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সব কিছুতে বর্তমান সরকারের সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনেও নৌকায় মনোনয়ন পাওয়ার আশা রাখছি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঁশখালী পাশের চকরিয়া, পেকুয়া ও আনোয়ারা উপজেলা আমাদের চেয়ে অনেকগুণ পিছিয়ে আছে। তাই আগামীতে বাঁশখালীর আপামর জনসাধারণকে সাথে নিয়ে পিছিয়ে পড়া বাঁশখালীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
এডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, পারিবারিকভাবে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তাঁর পিতা এডভোকেট আবদুস সবুর ছিলেন বাঁশখালী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি নিজেও দলের দুঃসময়ের নির্ভীক কর্মী।
ডা. আলমগীর চৌধুরী বলেন, প্রতিমাসে এলাকার মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষদের সেবা করার জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
পূর্বকোণ/পিআর