শঙ্খ নদী দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল দু’পাড়ের মানুষকে আংতকে রাখে। নদীর প্রবলস্রোতে তলিয়ে যায় এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। এই শঙ্খ পাড়ের মানুষের মাঝে এখন ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী উত্তাপ। চট্টগ্রাম-১৪ আসন তথা চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) এলাকার সংসদীয় আসনে চন্দনাইশের ২ পৌরসভা, ৮ ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তী সাতকানিয়ার ৬ ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকাটি নির্ধারণ করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে আ. লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্যসহ ৯ জন, বিএনপি থেকে ৩, এলডিপি, গণ ফোরাম ও জাসদ থেকে ১ জন করে, জাতীয় পার্টি থেকে ২, ইসলামী ফ্রন্ট থেকে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ম সংসদ সদস্য হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রমকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে ২য় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর চন্দনাইশ উপজেলা আ. লীগের সভাপতি, দক্ষিণ জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আ. লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ছাত্রজীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন।
এ সকল সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন, দক্ষিণ জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, তিনি ছাত্রজীবনে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম গণ-জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রসহ ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। দক্ষিণ জেলা আ. লীগের উপদেষ্টা ৩ বার চন্দনাইশ উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক জি.এস, কেন্দ্রীয় আ.লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য আবদুল জব্বার চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আ. লীগের উপদেষ্টা এম.এ সায়েদ, বিজিসি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দীন আহম্মদের ছেলে, বাংলাদেশ আ. লীগ কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দীন আহমেদ আসিফ, চন্দনাইশ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাবেক সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সদস্য আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক, সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ মুরিদুল আলমের ছেলে, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুর রহমান শিবলী, আ.লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সাবেক সদস্য মামুন চৌধুরী।
অপরদিকে এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ৬ বারের সাবেক সংসদ সদস্য কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম ঐক্যজোট থেকে না হলে নিজ দল এলডিপি থেকে ছাতা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। ১৯৭৬ সালে চন্দনাইশ থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ আসনে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি’র প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবুল কবির চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রদূত হলে ১৯৮১ সালে উপ-নির্বাচনে এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমেদ।
ঐক্যজোট না হলে বিএনপি থেকে এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি ইতিপূর্বে মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক, এছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে সাবেক শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের ভাই ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট মিজানুল হক চৌধুরীসহ একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে একটি আলোচিত আসন। এ আসনটি এক সময় বিএনপি’র ঘাঁটি হিসেবে কর্নেল অলি ১৯৮০ সাল থেকে ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে লিবারেল ডেমোক্রোটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করে ছাতা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন তিনি। সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে ওসমান গণি চৌধুরী (অভিক ওসমান), গণফোরাম থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক অলি উল্লাহ চৌধুরী মাসুদ, রওশন এরশাদ গ্রæপের জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাদশা মিয়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব শিহাব উদ্দিন মো. আবদুস সামাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিশে শুরা সদস্য, আনজুমানে খুদ্দামুল মুসলেমিন, গাউসিয়া কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান সমরকন্দী সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে এ আসনটি ছিল বিএনপি’র দখলে। বিগত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি হওয়ার পর বিগত টানা ১০ বছরে পুরো চন্দনাইশের চেহারা পাল্টে যায়। বিশেষ করে শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন ভবন, উপজেলার ভরাট ও অচল খালগুলো খনন, বরকল ব্রিজ, দোহাজারী ব্রিজ, মাজার পয়েন্ট ব্রিজ, খোদার হাট ব্রিজ, ধোপাছড়ির জিরোবুক ব্রিজ, ধোপাছড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগ, ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চন্দনাইশ পৌরসভায় পানি শোধানাগার স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের আস্তা অর্জন করেছেন।
পূর্বকোণ/এএইচ