কক্সবাজারের টেকনাফে সাড়ে ৭ শতাধিক হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম শাকসবজির চাষাবাদ হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে সমতল ভূমি ও পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদকৃত শাক-সবজি ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা টমটম, অটোরিকশায় করে প্রচুর শাকসবজি বাজারজাত করতে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমা পাড়া বাজার, রইক্ষ্যং বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টাটকা শাকসবজি নিয়ে চাষিরা বাজার ভরিয়ে রেখেছে। কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফ ও হ্নীলা বাজার এলাকার পাইকারি সবজি ক্রেতা ও মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা এসব শাকসবজি সূলভ মূল্যে কিনে চড়া দামে বিক্রি করার জন্য নিকটস্থ বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদিত হলেও বাজার কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম দিন দিন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি বছরের রবি মৌসুমে ৭৬০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে শাকসবজির আবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সার ও কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় এরং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম শাকসবজি আবাদ হয়েছে। বাজারে সবজি দাম ভালো আছে তাই কৃষকেরা সবজি চাষের কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।
উপজেলার হোয়াইক্য ইউনিয়নের কম্বনিয়া পাড়া, কাঞ্জর পাড়া, রইক্ষ্যং, হরিখোলা, লাতুরীখোলা, লম্বাঘোনা, আমতলী, হ্নীলা ইউনিয়নের রোজারঘোনা, মরিচ্যাঘোনা, পানখালী, লেচুয়াপ্রাং, উলুচামরী, আলীখালী, রঙ্গিখালী, দমদমিয়া, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া, হাবিরছড়া, মিঠাপানিরছড়া, লেঙ্গুরবিল, লম্বরী, হাতিয়ারঘোনা, জাহালিয়া পাড়া, পল্লান পাড়া, মহেষখালীয়া পাড়া, কচুবনিয়া, ছোট হাবির পাড়া, বড় হবির পাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের মনতলিয়া, শামলাপুর, শিলখালী, মাথাভাঙ্গা, বড় ডেইল, হাজাম পাড়া, মারিশবনিয়া, নোয়াখালী, সাবরাং ইউপির ডেগিল্লারবিল, আলীরডেইল, বাহারছড়া, রুহুল্ল্যার ডেবা, কচুবনিয়াসহ উচু ও পাহাড়ি এলাকায় আগাম শীতকালীন শাকসবজি আবাদ ও উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্রামের কৃষকদের পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার যুবকেরা কৃষিকাজের প্রতি ঝুঁকছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় মাঠপর্যায়ে কৃষকের পাশে থেকে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কৃষির আবাদ বৃদ্ধিতে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।
কয়েকজন ভোক্তা জানান, উৎপাদিত স্থানে শাকসবজির দাম অনেক কম। কিন্ত সিন্ডিকেট ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের কারণে অসহায়, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীন উর্ধ্বমুখী হওয়ায় তরি-তরকারি ও শাকসবজির মূল্য নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমতে পারে।
হোয়াইক্যং ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকার কৃষি খাত এবং কৃষকদের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিলেও সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের ভয়ে অনেকে পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদে ভয় পাচ্ছে। তা না হলে স্থানীয় বাজারে আরও বেশি শাকসবজির উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ত’।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম কুতুবী বলেন, ‘আমরা সরকারি আদেশে এবং উপজেলা কৃষি অফিসারের নির্দেশনাক্রমে পুরো উপজেলার শাক-সবজি চাষিদের বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে কৃষি উৎপাদনে স্থানীয় চাষীদের উৎসাহ দিয়ে আসছি। ফলে পুরো উপজেলায় শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক চাষাবাদ এবং উৎপাদনও ভাল হয়েছে’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃষকদের সার্বিক সহায়তার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। সূলভ মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার দিয়ে শাক-সবজি চাষিদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও পরামর্শের দিয়ে যাচ্ছি। কোন শাকসবজি বা ফসল রোগাক্রান্ত হচ্ছে কি না তদারকি করছি। স্থানীয়ভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণের পর বাহিরে রপ্তানি করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য উৎসাহ যোগাচ্ছি। আমরা সকলে আন্তরিক হলে চাষাবাদের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারব’।
পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ