চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চুরি-ডাকাতি-খুনসহ নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে

সাতকানিয়ায় বাড়ছে রোহিঙ্গা আবাস

ইকবাল মুন্না, সাতকানিয়া

৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ৯:২২ অপরাহ্ণ

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে একে একে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা ঠাঁই নেয় বাংলাদেশে।

 

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ঠাঁই নেয়া এসব রোহিঙ্গার অনেকে আবার দালালের মাধ্যমে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। পালানো রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বসতি গড়ে তুলেছে সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। এসব রোহিঙ্গার কেউ কেউ বিভিন্ন সময় চুরি, ডাকাতি, খুনসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়েছে। আবার কেউ কেউ নাগরিকত্ব নিয়ে নিচ্ছে অসাধু উপায়ে। আইডি কার্ড বানিয়ে কেউ হয়েছে স্থানীয়, আবার কেউ করছে মাদক ব্যবসা। কেউ বন বিভাগের পাহাড় দখল করে স্থানীয় কিছু দখলদারের যোগসাজশে গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গা কলোনি। সেই কলোনি থেকে কেউ ইটভাটায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ করছে, কেউ বিলে গিয়ে হালচাষ ও কেউ মাদক বিক্রি করছে। কেউ আবার হানাহানিতে লিপ্ত হচ্ছে।

 

তথ্যমতে, উপজেলার ছদাহা, কেঁওচিয়া, আমিলাইশ, কালিয়াইশ, বাজালিয়া, পুরানগড়, ঢেমশাসহ বেশ কয়েকটি জায়গা মিলিয়ে আনুমানিক ১৫ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বসবাস করছে। এদের মধ্যে শুধুমাত্র ছদাহা ইউনিয়নে বসবাস করছে হাজারখানেক। ছদাহার হাসমত আলী সিকদার দোকানের পাশে একটি কলোনিতে ৩শ জন, ছদাহা ও কেঁওচিয়া সীমান্ত সংলগ্ন হরিণতোয়া এলাকায় ৩শর অধিক, পূর্ব ছদাহার একটি মাছের ঘেরে প্রায় শতজন, ছদাহার কেঁওচিয়া স্কুল সড়কে কয়েকটি কলোনিতে প্রায় ২৫০ জন বসবাস করছে। ছদাহার হরিণতোয়া এলাকায় গাড়ি চলাচলের অসুবিধা ও হাঙ্গর খালে সেতু না থাকার কারণে যাওয়া খুবই দুষ্কর। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, পুলিশ কেউ সেদিকে সহজে যেতে চান না। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপরাধের আস্তানা গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা।

 

তথ্য আছে, ২০২১ সালের ২৫ মে সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়ন এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে সৈয়দুল ইসলাম (১৯) নামে রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হয়। ২২ সালের ৯ জানুয়ারি সাতকানিয়ায় ১২ শ পিস ইয়াবাসহ দুজন রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়। ১৮ এপ্রিল ১৫ হাজার ইয়াবাসহ ৪ রোহিঙ্গা নারী গ্রেপ্তার হয়। ১৯ জুলাই ছদাহার নুরু কলোনির টয়লেটের সেফটি টাংকি থেকে সামসুন্নাহার (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দোষী সন্দেহে নিহতের স্বামী মো. বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২২ সেপ্টেম্বর ৩৪শ পিস ইয়াবাসহ মো. জোনায়েদ প্রকাশ ইউনুস প্রকাশ জনি (২২) নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিক গ্রেপ্তার হয়। ২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রোহিঙ্গা ডাকাতের হাতে নিহত হন সাতকানিয়ার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ওরফে মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

 

একই সালের ৩০ জানুয়ারি লোহাগাড়ায় রোহিঙ্গাদের হাতে খুন হন জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন। এ বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ছদাহা এলাকার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর গাড়িচাপায় হামিদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু হয়। ছদাহা ইউনিয়নের হরিণতোয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ বেলাল বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা বন বিভাগের জায়গা দখল করে বসতি গড়ে তুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে মামলার হুমকিও প্রদান করে। আমি চাই আমাদের হরিণতোয়া রোহিঙ্গামুক্ত হোক।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মুজিবর রহমান রোহিঙ্গা বসবাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে থেকে হরিণতোয়ায় কিছু রোহিঙ্গা বসবাস করছে। আমি তাদের ক্যাম্পে ফেরাতে উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। কেঁওচিয়া বন গবেষণাগার কেন্দ্রের কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ছদাহা এলাকায় আমাদের বনের বিশাল জায়গা বেদখলে। আমরা সেগুলো উদ্ধারে উচ্চ আদালতে মামলা করেছি এবং রায়ও পেয়েছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে নামজারি করে দখলকৃত পাহাড়গুলো উদ্ধারে ব্যবস্থা নেব।

 

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত বলেন, যদি রোহিঙ্গারা কোথাও বসবাস করছে সেই তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে তাদের প্রত্যাবর্তন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে কোনভাবে ভোটার হতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং যাচাই-বাছাই করে জন্ম নিবন্ধন করতে বলেছি। যদি রোহিঙ্গারা স্থানীয় কারো যোগসাজশে পাহাড় কাটে, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করবো। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি আছে।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট