চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী রেল স্টেশন লাগোয়া রেলের বিশাল জায়গা বেহাত হতে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। কয়েকদিনের টানা বন্ধে জোরেসোরে চলছে ভরাট কাজ। রেলের জায়গা দখল করে মার্কেট ও দোকান নির্মাণ করা হবে বলে জানান স্থানীয়রা।
রেল ও স্থানীয়রা জানান, রেলের প্রায় ৫২ শতক কৃষি জমি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রশাসন ও পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে চলছে দখলদারিত্ব। অভিযোগ রয়েছে, রেল কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় বিশাল জায়গা বেহাত হতে চলেছে। রহস্যজনক কারণে ‘কানা মামার’ ভূমিকা পালন করছেন রেল কর্মকর্তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-দোহাজারীর লেনের গোমদণ্ডী রেল স্টেশনের পাশেই বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বিশাল এলাকা। ভরাটের পর তাতে নির্মাণ করা হবে মার্কেট ও দুই শতাধিক দোকান। এক সপ্তাহ ধরে ভরাট কাজ চলে আসছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে ট্রাকে ট্রাকে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। দিনের বেলায়ও বালু ফেলা ও ভরাট কাজ চলছে।
দৈনিক পূর্বকোণে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন রেলের মাঠ কর্মকর্তারা। ফিল্ড কানুনগো সোলাইমান হোসাইন গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে ভরাটের প্রমাণ পেয়েছি। আর যাতে কেউ ভরাট করতে না পেরে সেজন্য থানায় (বোয়ালখালী থানা) অভিযোগ জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিদর্শনের সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই আশপাশ এলাকায় নোটিশ করে এসেছি। থানা ও স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে এ বিষয়ে নিয়মিত খবর রাখছি।’
বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আছহাব উদ্দিন রেলের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে এখনো চিঠি দেখা বা পড়া হয়নি বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ভরাট কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই দোকান বিক্রির কথা চাউর করা হয়েছে। অনেকেই দোকান কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন। দোকান নিতে আগ্রহী স্থানীয় মোকতেয়ার নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুনেছি দুই শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি দোকান দুই লাখ টাকা করে বিক্রি করা হবে।’
গত বুধবার বোয়ালখালী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভায় রেলের জায়গা ভরাট নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
এতে উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কয়েক লাখ টাকা দিয়ে দোকান কেনার সামর্থ্য রাখে না।’
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘হকার পুনর্বাসন করার ইচ্ছে থাকলে আমরা জায়গা করে দিতে পারি। তারা দোকান বেঁধে নেবে। হকাররা তো ৩-৫ লাখ টাকা দিয়ে দোকান কিনতে পারবে না।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘কারা কি জন্য ভরাট করছে আমার জানা নেই।’ কাল (আজ রবিবার) খবর নেব।’
জানা যায়, গত আগস্ট মাসে গোমদণ্ডী স্টেশন মাস্টারসহ সকল লোকবল সরিয়ে নিয়েছে রেলওয়ে। ফলে লোকবল শূন্য রয়েছে গোমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশন। এই সুবাধে সরকারি দলের একটি সিন্ডিকেট রেলের জায়গা দখল মচ্ছবে মেতেছে।
রেল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হলে গোমদণ্ডী রেল স্টেশনের গুরুত্ব ও ব্যস্ততা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। স্টেশনকে ঘিরে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে রেলের।
পূর্বকোণ/পিআর