রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে ঘিরে এ যাবতকালের সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর। ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হালদা নদী রক্ষা’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের অধীনে নদীর দুই তীরে পুরাতন হ্যাচারিগুলো সংস্কার করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, নতুন করে আরো হ্যাচারি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। আগামী অক্টোবরে মাঠে গড়াবে এ প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালদা পাড়ে রাউজান ও হাটহাজারী এলাকার পুরাতন ৬ হ্যাচারিকে সংস্কার করে সুযোগ-সুবিধা দ্বিগুণ বৃদ্ধি, নতুন করে আরো ৬টি হ্যাচারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, ৪টি সার্ভেল্যান্স চেকপোস্ট কাম ওয়াচ টাওয়ার ও ঘাট নির্মাণসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দুই বছর আগে একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল মৎস্য অধিদপ্তর। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তাতে বিভিন্ন কাজ কাঁটছাট করে প্রকল্পের ব্যয় এক-তৃতীয়াংশেরও কমে নিয়ে আসে বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। চলতি বছরের অক্টোবরে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সহসা প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হবে বলে জানা গেছে।’
সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ও রেণু উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধাও। এছাড়াও দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান, স্টাডি ও গবেষণা, হালদা নদীতে অবৈধ মৎস্য শিকার, দূষণ সৃষ্টি প্রতিরোধ এবং মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন, স্টেকহোল্ডার উদ্বুদ্ধকরণ সভাসহ বিভিন্ন কর্মকা- বাস্তবায়নে সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, দুই দশক আগে প্রায় ১৪ কোটি টাকার ‘হালদা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রকল্পে নদীর ড্রেজিং খাতে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৭ কোটি টাকা দিয়ে নদীর পাড়ে ৬টি হ্যাচারি নির্মাণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। রাউজানের কাগতিয়া, গহিরার মোবারকখীল ও পশ্চিম গহিরা এবং হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়–য়াপাড়ায় এসব হ্যাচারি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণগত ত্রুটি, সময় মতো সংস্কার, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হ্যাচারিগুলো থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম সংগ্রহকারীরা। এর মধ্যে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কাগতিয়া হ্যাচারি। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিও। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ডিম সংগ্রহকারীদের। বর্তমানে রাউজানের গহিরার মোবারকখীল, হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়–য়াপাড়ার হ্যাচারি চালু থাকলেও নিয়মিত সংস্কারের অভাব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় সবগুলো হ্যাচারি থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম আহরণকারীরা। তাতে বিভিন্ন সময়ে মারা যাচ্ছে রেণু। তাই আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হবে ডিম সংগ্রহকারীরা।
এদিকে হালদা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের অধীনে ড্রেজিং খাতে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখায় ওইসময়ে প্রতিবাদ করে ডিম সংগ্রহকারী ও হালদা নদী রক্ষা কমিটি। তাদের অভিযোগ ছিল- হালদা নদী ড্রেজিংয়ের কোন প্রয়োজন নেই। ড্রেজিংয়ের নামে সরকারি টাকা নয়-ছয় হওয়ার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ওইসময়ে ড্রেজিং খাতের ৭ কোটি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
পূর্বকোণ/পিআর