আমদানি করা জ্বালানি তেল জাহাজ থেকে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে খালাসে গভীর সমুদ্রে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ প্রকল্পের কমিশনিং শুরু হবে আগামী অক্টোবরে শেষের দিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কমিশনিং শেষে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের দিকে প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসে আর লাগবে না লাইটার জাহাজ। যেখানে ১২ দিন নয়, তেল খালাস হবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। অক্টোবরেই গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করা বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে আসতে যাচ্ছে জ্বালানি তেল। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। এর মাধ্যমে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল খালাস ও পরিবহন প্রক্রিয়ায় আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং প্রযুক্তি, বহির্বিশ্বের মতো তেল খালাসে এবার নতুন প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। যার জন্য গভীর সমুদ্রে বসানো হয়েছে বিশেষ বয়া। সেই বয়ার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করা বড় জাহাজ থেকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে যাওয়া ডাবল পাইপলাইনে মহেশখালীতে নির্মিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কে আসবে জ্বালানি তেল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, এসপিএম প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক। ছয়টির মধ্যে প্রতিটি ৬০ হাজার কিলোলিটার ধারণ ক্ষমতার তিনটি ট্যাঙ্কে অপরিশোধিত তেল এবং বাকি প্রতিটি ৩৬ হাজার কিলোলিটার ধারণ ক্ষমতার তিনটি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করবে ডিজেল। একই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পাম্প স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, মিটারিং স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম। যা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।
দেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা কমিশনিংয়ের কাজ পুরোপুরি অক্টোবরের শেষের দিকে কিংবা নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে শুরু হবে। পরীক্ষামূলক কমিশনিং শেষ হলেই খুব শিগগির প্রকল্পটি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. শরিফ হাসনাত।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা কমিশনিংয়ের কাজ পুরোপুরি অক্টোবরের শেষের দিকে কিংবা নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে শুরু হবে। প্রথমে ক্রুড অয়েল কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এবং তার পরপরই ডিজেল অয়েল কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করছি, যথাসময়ে এটা সম্পন্ন করতে পারব।
চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড বর্তমানে দেশের প্রথম এসপিএম সিস্টেম তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ও চীনের জিটুজি প্রকল্পের আওতায় ৮৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এসপিএম। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তেল পরিবহনেও নৈরাজ্য কমানো সম্ভব এই প্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, গভীর সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী ট্যাঙ্ক পাম্প স্টেশনে তেল মজুদ করা হবে। যেটি মাধ্যমে তেল আনা হবে সেটি হচ্ছে এসপিএম বয়া, যা গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে যে ব্যবস্থায় জ্বালানি তেল বড় জাহাজ থেকে খালাস করতে ১২ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। এটা বড় জাহাজ থেকে আবার লাইটার জাহাজ এবং এরপর অনেকটা মানুষ দিয়ে আনলোড করতে হয়। যার সময় ও অর্থ দুটিরই অপচয় হয়। এই এসপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে যার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এই ব্যবস্থায় থাকবে না সময় ও অর্থের অপচয়। পুরো ব্যবস্থাপনাটা অটোমেটিক হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা সময় যদি বলি, যেখানে জ্বালানি তেল খালাস করতে ১২ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতো, সেখানে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় গভীর সাগরে বড় জাহাজ থেকে বিশেষ বয়া’র মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের সাহায্যে মহেশখালীতে স্থাপিত রিজার্ভ ট্যাঙ্কে মজুদ করা যাবে। আর্থিক ব্যয়ের কথা যদি বলা হয় সেক্ষেত্রে বছরে নূন্যতম ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। এই প্রজেক্টের যে ব্যয় তা আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে উঠে আসবে। তিনি আরও বলেন, এসপিএম প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী অক্টোবরের শেষের দিকে কমিশনিংয়ের দিকে যাব। কমিশনিংটা শেষ হলে পরে আশা করি, নভেম্বরে বা ডিসেম্বরের দিকে পুরো অপারেশনাল কাজে আমরা চলে যেতে পারব।
সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, এসপিএম প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল আনলোড করার ক্ষমতা রাখে।
পূর্বকোণ/আরডি