পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ সনদ প্রদান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছে। তিন দম্পতিকে বৈবাহিক সনদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ সনদপ্রদান কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সকল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে এই বৈবাহিক তথ্য নথিভুক্তিকরণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা। এটি জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন পদ্ধতিতে নথিভুক্ত করার অংশ। অনাকাক্সিক্ষত বিষয় ঠেকানোর জন্য এই দালিলিক নথিভুক্ত করণ। বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পরিবারের পাশাপাশি এনজিও, সামাজিক নেতৃত্বও ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে কন্যার অমতে বিয়ে দিলে এটি চাকমা আইনে অবৈধ বিবেচিত হবে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় রাঙামাটি জেলা শহরের রাজবাড়ি এলাকার সাবারাং রেস্টুরেন্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈবাহিক তথ্য নথিভুক্তিকরণ এবং বিবাহ সনদপ্রদান বিষয়ে তদবির (লবি) সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সহযোগিতা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) প্রোগ্রেসিভ এ সভার আয়োজন করে।
সিএইচটি উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম রাঙামাটির সভাপতি টুকু তালুকদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য নিরূপা দেওয়ান। বক্তৃতা করেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা এড. সুস্মিতা চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা। বৈবাহিক তথ্য নথিভুক্তিকরণ এবং বিবাহ সনদ প্রদানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য নুকু চাকমা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্তি দেওয়ান।
অনুষ্ঠানে তিন দম্পতি বৈবাহিক সনদ প্রদানের মধ্য দিয়ে চালু হল পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের বৈবাহিক সনদ কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় আসা প্রথম এই তিন দম্পতি হলেন- নিখুঁত দেওয়ান-ত্রিশিলা চাকমা, আকন্দ চাকমা-সঞ্চারী চাকমা এবং রক্তিম দেওয়ান-বিজয়া চাকমা দম্পতি।
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা মতামত ব্যক্ত করেন, শিক্ষাবিদ অঞ্জুলিকা খীসা, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, পৌর কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা, হেডম্যান থোয়াই অং মারমা, হেডম্যান শান্তি বিজয় চাকমা, আলোসোনা চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দালিলিক প্রমাণের জন্য, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিরোধে এই কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় কারবারিরা যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ করতে পারেন তাহলে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থায় সহযোগী হবে।
পূর্বকোণ/আরডি